“নিস্তব্ধতার অনুকর্ষী ক্রিয়াগুলির নিপুণ শক্তিমত্তার প্রান্তিক ধারাপাত কবি মারুফুল আলমের প্রথম কাব্যগ্রন্থ, স্তব্ধতার ধারাবিবরণী │ সৈয়দ তৌফিক উল্লাহ
পাঠ-প্রতিক্রিয়া
নিস্তব্ধতার অনুকর্ষী ক্রিয়াগুলির নিপুণ শক্তিমত্তার প্রান্তিক ধারাপাত কবি মারুফুল আলমের প্রথম কাব্যগ্রন্থ, স্তব্ধতার ধারাবিবরণী │ সৈয়দ তৌফিক উল্লাহ |
স্তব্ধতার ধারাবিবরণী“ কবি মারুফুল আলমের প্রথম প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ হলেও কবিতার সাথে তার নাড়ীর বাঁধন চার দশকের বেশী সময় ধরে। যদিও তিনি কম কবিতা লেখেন, শিল্প ও আত্মচেতনার ছোটকাগজ, প্রতিশিল্প সম্পাদনাই যেন তার মৌলিক ধ্যানজ্ঞান। স্তব্ধতার ধারাবিবরণী কাব্যগ্রন্থো পাঠ করে মনে হয়েছে কবির নিজস্ব দর্শনে সুনিপুণ ছন্দের প্রয়োগ করে শব্দের ব্যবচ্ছেদ করেছেন, মালা গেঁথেছেন স্তব্ধতার ধারাবিবরণী কাব্যগ্রন্থে স্থান পাওয়া ৩০টি কবিতার প্রতিটি লাইন, পয়ার, পঙতিমালায়।
কখনও আত্মদ্বন্দ, ব্যাক্তিচীন্তা, চারপাশে ঘটে যাওয়া নৈমেত্তিক সামজিক পরিভ্রমনের অনুসন্ধিৎসু ঘটনা/রটনার নীবিড়তম পর্যবেক্ষণ জ্ঞান আর শব্দের স্বচ্ছলতা দিয়ে বিনস্ত করেছেন সৃজনশীল ও প্রাজœল বর্ণমালার ঠাসা বুনোটে যুগোপযোগী শব্দের বিন্যাসে। স্তব্ধতার ধারাবিবরণী কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশিত হয়েছে ২০০৫ সনে, প্রকাশ করেছে শিল্প ও আত্মচেতনার ছোটকাগজ, প্রতিশিল্প। প্রচ্ছদ করেছেন ধর্মনরায়ণ দাশগুপ্ত। কব্যগ্রন্থটি উৎসর্গ করেছেন কবি তার মা ও বাবা কে।
“দিগন্ত রেখার মত ঝুেেল থাকে মাথার উপর
বিপর্যস্ত অবহেলা,Ñদৃশ্যজুড়ে মুগ্ধ জাগরণ।-(এক এর শেষ দুই লাইন)
----
নিসর্গের ইতিহসে পুনর্বার ভেঙে পড়া চাঁদ,
নিজেকে নিজেই তুমি এতকাল করেছো গোপন:
নিজস্ব ইচ্ছের কাছে নতজানু সিক্ত দড়ি-পথ...
পিচ্ছিলতা ভেদ করে উঠে আসে ; প্রবীন পাথর।-(দুই)
----
স্তব্ধতার অনুসঙ্গে, সাড়ে-তিন-হাত নির্জনতা
তুমুল পেঁচিয়ে ধ‘রে জাগাতিক মৃত্যু অভিপ্রায় -(চার এর প্রথম দুই লাইন)
---
দাউ দাউ জ¦লে ওঠে, আকাক্সক্ষার নান্দনিক চিতা...-(পাঁচ এর তৃতীয় লাইন)”
-(স্তব্ধতার ধারাবিবরণী- পৃ:৪১)
স্তব্ধতার ধারাবিবরণী কাব্যগ্রন্থের ৩০টি কবিতার প্রত্যেকটিতেই রয়েছে স্বকীয়তার অনুভব। রয়েছে খন্ডকালীন প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতার অনুরণ, বাজারী নির্মোহ আকাঙ্খা, একাকীত্বের উপভোগ, নিজস্বতার উল্লাস, ভাব,ভাষা, চিত্রকল্প, দৃশ্যকল্প, অলঙ্করণ, কাব্যবাকরীতির ইঙ্গীতময়তা যা কবির স্বভাব সুলভতার বা প্রত্যাশার আবার বিরুদ্ধতায় নিজেকে নিজের অস্তিত্বকে খন্ড খন্ড করে পুনরায় সামগ্রিক চরিত্রায়ন করেছেন, তাই হয়তো কবি কাব্যগ্রন্থের নাকরণ করেছেন,“স্তব্ধতারধারাবিবরণী”।
কবি নির্জনে নিভৃতে থেকে গড়ে তুলেছেন তার নিজস্বকাব্যের জগৎ। তার দুটো সত্তা- একটি সবসময় লুকিয়ে পড়তে চায়, আরেকটি সত্তা বেরিয়ে আসতে চায। এই দুটো সত্তার মধ্যে অনবরত দ্বন্দ চলতে থাকে, এর থেকে উৎপত্তি হয়ে কবি প্রথমে তার আমিত্বকে প্রকাশের তাড়না অনুভব করেন, তারপর প্রকৃতিগত ভাবে আসে তুমি, অতঃপর কবির প্রকাশে ভিড় করে মৃত্তিকা মানুষ সমগ্র পৃথিবী। তবে হ্যাঁ, সাধারণত আমি তুমি প্রেম তাড়িত বা দেশাত্মবোধক কবিতায় বেশি উচ্চকিত যা সর্বজনীন বিষয় ভিত্তিক কবিতার সাথে কিঞ্চিত সাংঘর্ষিক হলেও শব্দ প্রয়োগের নৈপুণ্যে কালজয়ী হয়। তার জলন্ত উদহারন কবি নজরলের বিদ্রোহী কবিতা। মাঝে মাঝে তো করতে হয়। শব্দ প্রয়োগ ও উপস্থাপনাগত কৌশলের মধ্যে শব্দ দুটোর ব্যবহারের যথার্থতা নিহিত। তাতে দোষের কিছু নেই। রবীন্দ্রনাথ থেকে শুরু করে সব কবি কম- বেশি আমিত্বকে প্রকাশের করেছেন। তাই করা, না করার মধ্যে কৃতিত্ব ধরে রাখাই প্রকৃত কবির, শিল্পীর কাজ। যা আলোচ্য কাব্যগ্রন্থের কিছু কবিতায় কবি আমিত্বকে প্রকাশে শব্দ প্রয়োগের নৈপুণ্যে দেখিয়েছেন। যে কারনে তিনি প্রশংসার দাবীদার।
“আমিতো পথিক নই তদুপরি, হায়
ধূলিবিদ্যা ভালোবাসি ঢের, ঘনঘোর
অন্ধকারে ডানা মেলে উড়ে যাই
যেখানে আলোর গতি আঁধার-পাঁজর- ধূলিবিদ্যা, প্রখর দুপুর-(পৃ: ৩৬)।”
অন্ধকার জগৎ একটি বিশেষ অবস্থার নাম। এক পরিব্যপ্ত অন্ধকার চেতনা আলোচ্য কাব্যগ্রন্থের কতিপয় কবিতার উপমা চিত্রগুলোর মর্মে গেঁথে আছে। আর তাই কবি আড়ষ্ঠতার রোমান্টিক অন্ধকাওে নিঃসঙ্গতার রোমান্টিক বৈশিষ্ট্যকে অন্যভাবে ধারণ করেছেন। অনুভব করতে সচেষ্ট থেকেছেন চেতনার অন্ধকার রূপ ও রূপান্তরকে গ্রন্থিত করেছেন কাব্য ভাষার মাধ্যমে। কবিতার শব্দ চিত্রকল্পে, উচ্চকিত আহ্বান করেছেন;-
“করজোড়ে আজ মিনতি জানাই বিষন্ন আমাকে তুমি ফিরায়ো না
আর পদতলে ঠিক, তোমার ওই পবিত্র খড়ম ফিরবেই ঋতুমতী ভৈরবের ঘাটে।
-গরিব শাহ্'র উপাখ্যান ও মাছরাঙা -(পৃ: ২৫)।”
আপাতদৃষ্টিতে আলোচ্য কাব্যগ্রন্থে কবি তার কবিতায় উল্লেখযোগ্য প্রতীকী চর্চা করেছেন। প্রতীকে লুকিয়ে থাকে অসীম সম্ভাবনা। মানবজীবনের চলমান মুহূর্তগুলোকে কবিতার অংশ হিসেবে বিবেচনা করলে, কবি মাত্রই শব্দ, ছন্দ, অলংকার এর যুথবদ্ধতায় অএকসুতোয় “স্তব্ধতার ধারাবিবরণী” গেঁথে রেখেছেন।
”প্রসঙ্গত, জলের গভীরে তার প্রতিবিম্বে দেখি:
আকাশের মানচিত্রে খ'সে পড়ে মেঘের পালক! - প্রসঙ্গত-(পৃ: ২৬)।”
এছাড়াও প্রলাপ গাঁথা সিরিজ এর ছয়টি কবিতায়, শব্দ শিল্পের নিরীক্ষা কে আগামী সময়ের পথে নতুন নির্ণয় রেখে দিতে সচেষ্ট হয়েছন।কবি যেন তার আত্মার মুলভাব নিংড়ে দিয়েছেন শব্দ থেকে পাঠকের নিউরনের গ্রন্থিতে বিন্যস্ত করেছেন চেতন-অবচেতন বিহ্বলতার বহিঃপ্রকাশে, কবি তার কবিতার শব্দ নির্বাচনের আন্তরিকতা ও সারল্যের যেন কোন কার্পণ্য করেননি। যুব পারিপাসু চেতনাকে তিনি এড়িয়ে না গিয়ে তার কবিতায় বিনষ্ট হয়নি পাঠকের সঙ্গে যোগাযোগ। কৃত্তিমতা ও নাটকীয়তার পাশাপাশি স্বাভাবিকতার কোন ঘাটতি নেই। কবিতার অন্তরঙ্গ ভাবনার ধারগুলো শুধু নিজের দিকেই বাঁকিয়ে রাখেননি, কাব্যের শিল্পগত সাফল্য যে কবিতা তাকে নমনীয় আকৃতি দান করে এ বিষয়ে তিনি সর্বোচ্চ সতর্কতা এবং বিষয় বস্তু নির্বাচনে ছিলেন প্রখর সচেতন।
এছাড়া তার প্রায় সব কবিতাই উল্লেখযোগ্য, যেমন:- বোধি সংহিতা (পৃ:৩১) / শালবনে সহজ সংকেত(পৃ:৩২) / চতুর্দশপদী (পৃ:৩৩ ও ৩৮) / ওড়ে মেঘ, এলোমেলো মেঘ উড়ে যায় (পৃ:৩৪) / একটি প্রেমের কবিতা,যৎসামান্য মুদ্রাদোষসহ (পৃ:৩৫), ধূলিবিদ্যা প্রখর দুপুওে (পৃ:৩৬) / রহস্য ১ ও রহস্য ২ (পৃ:৩৭) /, কমলা, এই উদরে (পৃ:৩৯), প্রাতিস্বিক প্রার্থনা: পরীক্ষিত পরিক্রমণ এবং অন্যান্য সিরিজের চারটি কবিতা (পৃ:৪৩) / এবং অংশত ঘুম বিষয়ক (পৃ:৪৮) কবিতা সমূহের শিল্পগত সাফল্য যে কবিতাকে উচ্চক্বীত স্বীকৃতি দান করেছে সন্দেহাতীত ভাবেই। খুব খুটিয়ে কবিতা সমূহ পাঠ করলেই কবির স্বকীয়তা, সর্বোচ্চ সতর্কতা এবং বিষয় বস্তু নির্বাচন ও শব্দ প্রয়োগে সচেতনা কাব্যগ্রন্থের শৈল্পিকমুল্যায়ন সমসাময়িক অথচ সুদূরপ্রসারী।
তার উল্লেখিত কবিতার লাইনগুলি আমাদের ইঙ্গিতদেয় সুদুর প্রসারি আশাবাদের, সমসাময়িক অসঙ্গতীর বিষয়গুলো কে পাশ কটিয়ে। তিনি সফল ভাবেই কাব্যভাষা চয়নের দিক থেকে শুরু করে সমন্বয়ে তুলে ধরেছেন সদৃশ্যতার নীতিকে।
কবি মারুফুল আলম তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ, “স্তব্ধতার ধারাবিবরণীতে”। কোন আরোপিত স্মার্টনেসের তোয়াক্কা না করে, সময় ও প্রকৃতির উপকূলে নিজেকে দাঁড় করিয়ে রেখে, নিজের মূল অনুভব শুষে নিয়ে স্বরচিত অক্ষরে ছড়িয়ে দিয়েছেন সুদক্ষ শব্দের কারিগর হয়ে শব্দ শিল্পের মাধ্যমেঅনুভব করিয়েছেন প্রবল প্রতাপময় আদিম শিকড়ের টান।
“পাতাল পিয়াসীআমি যেন এক বেহায়া বাউল
সুতীব্র সুরের টানে তুলে আনি শিকড়ের রাগ- তিন: ইতিহাস গাথা
-প্রাতিস্বিক প্রার্থনা: পরীক্ষিত পরিক্রমণ এবং অন্যান্য -(পৃ: ৪৩)।”
কবি মারুফুল আলমের আলোচ্য কাব্যগ্রন্থ, “স্তব্ধতার ধারাবিবরণী” পাঠ- প্রতিক্রিয়ায় সুস্পষ্টভাবে ফুটে ওঠে যুক্তি ও দর্শনের বৈশিষ্ট্য। সুস্পষ্টভাবে টের পাই কবির কবিতা নিয়ে শব্দ নিয়ে ক্রমাগত নিরীক্ষা প্রবণতা এবং তার কবিতায় প্রতিষ্ঠান বিরোধী দর্শনের তাত্ত্বিক ও প্রায়োাগিক পথ পরিক্রমার ত্যাগ, তিক্ততা, দ্বন্দ ও দ্রোহ । কবি মারুফুল আলমের এর কাব্যগ্রন্থ কে পাঠকের উপর চাপিয়ে দেওয়া যায় না? এটাকে ধারণ করতে হয়, মতান্তারে এখানে স্বাভাবিক, দ্বৈততা অর্জন, পথ নিরন্তর, ক্ষোভ পাথেয় আর এর থেকেই স্তব্ধতা, আত্ম উপলব্ধি, ফরমায়েশি সাহিত্যের দৈণ্যতা, কবির মনকে বিষন্ন করে তোলে। আর এগুলো থেকেই কবি প্রাপ্ত বোবা দ্রোহ কে তার “স্তব্ধতার ধারাবিবরণী” কাব্য গ্রন্থের প্রাণরস যুগিয়েছন কোন রকম হীনম্মন্যতাবোধের পরিচয় না দিয়েই। নিশ্চীত ভাবে ছোট কাগজের কাব্যিক দর্শনের সাথে দীর্ঘ নিদ্রিত মরচে পড়া শব্দসমূহ অত্ম-অনুভব আর তার সমকালীন প্রেক্ষাপট উপলব্ধির নতুন বিন্যাসে প্রবর্তন করেছেন কাবতার রূপে, তাঁর “স্তব্ধতার ধারাবিবরণী” কবিতা সমূহে। পাশাপাশি তিনি ক্রমশ ব্যক্তিগত আবেগ-অনুভূতি থেকে বেরিয়ে এস অন্যের কথা, দেশ ও সমাজের কথা বেশি হারে বলতে চাইবার প্রচেষ্টা লক্ষ্যণীয়।
“আহা হাড়ের পিঞ্জরে শুনি, ডাকিনীর উচ্চকিত হায়েনার হাসি এসো
হে সুজন তুমি দ’ুচোখ তালুতে রেখে, পুনর্বার ছুঁড়ে দেই- অংশগ্রহণ বিষয়ক(পৃ:৩৪)।”/
যদি কেউ দুঃখাভিভূত হন, অহংব্যাকুলতায় কাতর হন তাহলে কি তাঁকে নিরাসক্ত বলা যাবে? আমার বিনীত ধারণা দুঃখানুভূতি বা বেদনাবোধ ছাড়া কোনো সার্থক অনুভূতিতে পৌঁছনো যায় না, যা অনূদিত হয়ে কবিতা হয়ে ওঠে। “স্তব্ধতার ধারাবিবরণী”-পাঠ করে সরল ভাবেই বলা যায় যে কবির একান্ত নিজস্ব এমন কোনো সার্থক অনুভূতি রয়েছে যেটা অণুপ্রেরণায় কবি মারুফুল আলমের কাব্যগ্রন্থ তার সমসাময়িকদের মধ্যে অন্যতম এবং কাব্যফর্মের, বোধের, প্রয়োগের ঢং সম্পূর্ণ ভিন্ন।
তাইতো তিনি তার কবিতার পঙতিমলায় সততার সাথে বলতে পেরেছেন;-
-
তার কবিতার ভাষায় “আমাকে বোঝে নি কেউ জামরুল পাতা/
বরফের পাটাতনে উবু হয়ে আছি....- প্রলাপ গাথা -১ (পৃ:২৭) ।”
-
“আমার দু'হাত যেন ব্লেড তীক্ষè নগ্ন তরবারি /
মোমের মৃত্তিকা কেটে আনে শুদ্ধতম বীজ। -শালবনে সহজ সংকেত(পৃ:২৮)”।/
-
“মেঘের মোকামে আছি গুরু হে, প্রণাম /
গিলোটিন ঝুলে আছে মাথার উপরে। -চতুর্দশপদী (পৃ:২৮)”।
-
“তথাপি বুঝিনি সাঁইÑ জীবনের অন্য কোন মানে /
নক্ষত্রের উদ্ভাসনে অত্যুজ্জ্বল প্রতœ-বিস্মরণ -ওড়ে মেঘ, এলোমেলো মেঘ (পৃ:৩৪)। /
-
সব সমাজে ব্যক্তি মানুষ এর প্রবণতা ও বিশ্বাস এর মাঝে পার্থক্য সূক্ষ্ম, এর মূল কারণ অনেক গভীরে। ধূর্তামির মাত্রা অনুযায়ী মানুষ নিজেকে আড়াল করতে সক্ষম হয়। সমস্ত ব্যতিক্রম যথাসম্ভব বিবেচনায় রেখেই বলা যায়, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সাহিত্যের সাথে সাহসের যোগ ঘটে না। স্বীয় অবস্থাও অবস্থানকে (প্রচলিত ও আচরিত) অস্বীকার করে কলম চালাতে যে, মেধা ও মননশীলতা, সৃষ্টিশীলতার প্রয়োাজন তা অধিকাংশেরই নাই বা থাকে না ফরমায়েশি সাহিত্যের দৈণ্যতার গ্রাসে আচ্ছন্ন। তাই পরিশেষে সুস্পষ্টভাবে বলা যায় যে কবি মারুফুল আলমের কাব্যগ্রন্থ, “স্তব্ধতার ধারাবিবরণী” একটি নান্দনিক বিন্যাস। যা প্রতিটি পাঠকের চেতনায় নাড়া দিতে বাধ্য করছে বলে আমার বিশ্বাস।
“পোড়া ছাই পোড়া ছাই আগুনের স্মৃতিÑ /
নিহত নিজেকে খুঁড়ে জ্বালাবো উনুন।....। -প্রলাপ গাথা-২ (পৃ:২৮)”/
-
“সময়ের সিঁড়ি ভেঙে দাউ দাউ নেমে আসে ক্রোধের আগুন। নগ্ন এই বিষন্ন বয়স।
অগ্নিদগ্ধ ঘোর....।-প্রলাপ গাথা-৫ (পৃ:২৯) । ”/
-
তাঁর প্রেম একই সঙ্গে শারীরি ও অশরীরী, অকথ্য ও অনির্বাচনীয়, অনিবার্যভাবে পাপোন্মুখ, অনিবার্যভাবে অমৃতাভিলাষী। তিনি আমাদের বুঝতে দেন যে দুঃখ সুখের বিপরীত শব্দ নয়, দুঃখেই মানুষের প্রধান প্রয়োজন। মানব স্বভাব যেহেতু স্বাভাবিকভাবে বিশুদ্ধ নয়, দুর্বারভাবে পাপোন্মুখ, তাই দুঃখের চেতনা তার কাছে নিতান্ত প্রয়োজনীয়। দুঃখবোধই তার শোধনাগার, পার্গেটরি, যার ভিতর দিয়ে সে দুঃখকে অতিক্রম করে যাবে না, দুঃখকে অস্তিত্বের সঙ্গে মিলিয়ে নিতে শিখবে।
“কবি তুই, তোকেই বলি:
আমি নই অন্ধকারের.....
কবি হে, কুসুমকলি
যেতেছি মৃত্যুর দ্বারে -কমলা,এই উদরে (পৃ:৩৯)।”
কবি রহস্যময়তার সাথে কখনো কাব্যময়তা, কখনো গদ্যময়তা, কাব্যিক বিন্যাসে কবিতাকে নিয়ে যেন সমস্ত মনোঃসংযোগ দিয়ে শব্দের বন্ধ্যাত্ব ছুড়ে ফেলে দিয়ে অনন্য এক গতিশীলতা দান করেছেন কবিতা সমূহে। প্রত্যেকটি কবিতার কবির নিজস্ব ঢং রয়েছে, কোন কবিতাকে পাঠক না পড়ে এড়িয়ে যেতে পারবেন না।
“এসেছি, ডুবসাঁতারে
সমুখে প্রখর দুপুর
গূর্য, অন্ধকারে.....
শোনে কি কালের নুপুর? -কমলা,এই উদরে (পৃ:৩৯)।”
তাই বলা যায় “স্তব্ধতার ধারাবিবরণী” পাঠ শেষে প্রতিক্রিয়ায় বলতেই পারি কবি মারুফুল আলমের কাব্যগ্রন্থ, বিশেষ করে কবিতার পাঠক ও তরুণ কবিদের জন্য খুলে দিয়েছে শব্দ শিল্প প্রয়োগে ভাব ও ভাবনার এক বিশেষ অনুভুতিপ্রবণ নতুন জগৎ।
০৩/০৯/২০
কোন মন্তব্য নেই
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন