বাংলা সাহিত্যের প্রতিষ্ঠানবিরোধী লিটিলম্যাগাজিন ব্লগ

সাম্প্রতিক পোষ্ট

Home of Sayed Taufiq Ullah

https://stullah.blogspot.com/


সমসাময়িক বাংলা সাহিত্যের প্রতিষ্ঠানবিরোধী লিটিলম্যাগাজিন, লিটিলম্যাগাজিন সাহিত্যেচর্চার গবেষনা, বিষয়ক সৈয়দ তৌফিক উল্লাহ‘র সাহিত্য ব্লগ
বুর্জোয়ারা তাদের নানা রকম প্রতিষ্ঠান ও আইন দ্বারা আমাদের সাহিত্যচর্চ্চাকে প্রতিনিয়ত কুক্ষিগত করে চলছে।
এই কর্মকান্ডের অংশ হিসেবেই উঠতি বুর্জোয়ারা সংবাদপত্রের নামে এক ধরনের বুর্জোয়া প্রচারপত্রের জন্ম দিয়ে যায়।
আর তার জারজ সন্তানটি সাহিত্য সাময়িকী নামে বেড়ে ওঠে বুর্জোয়াদের খাচাঁয় পোষা ফরমায়েশী লেখকূল দিয়ে।
সাহিত্যের প্রকৃত স্বাদ অর্জন থেকে বিরত রেখে সাহিত্য কে পণ্যের স্তরে নামিয়ে এনে মুনাফা অর্জনে জনগণকে
হাজার বছর ধরে শোষণ করাই যার উদ্দেশ্যে। এই কর্মকান্ডের প্রতিবাদ এর বিপ্লবী নাম প্রতিষ্ঠানবিরোধী তথা ছোটকাগজের মুভমেন্ট।

এলিট ম্যাগাজিনগুলি, প্রায়ই "ছোট কাগজ" নামে পরিচিত, সাহিত্যিক পত্রিকাগুলি যা তুলনামূলকভাবে অজানা লেখকদের পরীক্ষামূলক ও অ-কনফিউমথিত রচনাগুলি প্রকাশ করে। তারা তাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে সাধারণত অবাণিজ্যিক। সর্বাধিক উল্ল্যেখযোগ্য উদাহরণ হল ছোট কাগজ ধারণাটি বাংলা ভাষাভাষীদের কাছে এসেছে পাশ্চাত্য থেকে; মোটের ওপর গত শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকে (১৯১২) হ্যারিয়েট মনরে সম্পাদিত যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহর থেকে প্রকাশিত পোয়েট্রি: আ ম্যাগাজিন অব ভার্সকে উপলক্ষ করে। তবে তারও আগে যুক্তরাষ্ট্রেরই বোস্টন শহর থেকে প্রকাশিত প্রচলিত ধর্মবোধের বিরুদ্ধে কথা বলা অধ্যাত্মবাদী দার্শনিক পত্রিকা দ্য ডায়াল (১৮৪০-৪৪) কিংবা ভিক্টোরীয়-বস্তুবাদবিরোধী ইংরেজি পত্রিকা স্যাভয়কে (১৮৯৬) বলা যেতে পারে এই ধারণার আদি রূপ। পরে প্রথম বিশ্বযুদ্ধোত্তরকালে একে একে প্রকাশিত হতে থাকে প্রকৃত ছোট কাগজগুলো। কয়েকটির নাম করা যেতে পারে—নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত আদার্স (১৯১৫-১৯১৯), শিকাগো, সানফ্রান্সিসকো, নিউইয়র্ক ও পারি থেকে একযোগে প্রকাশিত দ্য লিটল রিভিউ (১৯১৪-১৯২৯), লন্ডন থেকে প্রকাশিত দ্য ইগোয়িস্ট (১৯১৪)। এগুলো মূলত ছিল চিত্রকল্পবাদতত্ত্বপন্থীদের চারণক্ষেত্র। ১৯২০ সালে দ্য ডায়াল পুনর্জীবিত হয়ে এই ধারায় নতুনভাবে যোগ দেয়!  তাঁরাই সর্ব প্রথম লিটিলশ্যাগাজিন শব্দটি ব্যবহার করেছিল। ১৮৮০ সালে ফ্রান্সে প্রতিকীবাদী আর আমেরিকায় রুপকবাদী সাহিত্য হিসাবে এবং ১৯২০ সালে জার্মানীতে ব্যাপকহারে বুঁর্জোয়া, সাম্রাজ্যবাদীরা নানান মোড়কে প্রতিষ্ঠান বানিয়ে সুভিধাবাদী বাজারি, অর্থলোভী, প্রচারমুখি, স্বঘেষিত আঁতেল শ্রেনীর বিরুদ্ধে লিটল ম্যাগাজিন মুভমেন্ট শুরু হয়।

লিটল ম্যাগাজিন আধুনিকতা ঘটতে পারে। এই আধুনিকতার বিকাশে সামান্য ম্যাগাজিনের অবিচ্ছেদ্য ভূমিকার পুনর্বিবেচনার প্রস্তাব দেয় লিটল ম্যাগাজিন মুভমেন্ট।

 “পণ্য সাহিত্যের মিডিয়া বিরোধিতার পেছনে প্রতিশিল্পের একটা সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক দর্শন এবং সাংস্কৃতিক বিশ্বাস আছে। কোনো গোষ্ঠী বা ব্যক্তির আওতাভুক্ত হওয়া বা কারো ইচ্ছা সাপেক্ষে প্রতিশিল্প চালিত হয় না। কিঞ্চিৎ অপপ্রচারটা আমরা শুনি। এর পেছনে কারণটাও আমরা লক্ষ করেছি। আশির সৃজনশীল প্রতিবাদী আত্মনিমগ্ন একজন বিশ্বাসী লেখকের নিরবচ্ছিন্ন অধ্যবসায়কে কেন্দ্র করে বড় কাগজ ও তথাকথিত ছোটকাগজের ভেতরে যে আত্মগত সংকটের রূপ আমরা দেখছি তাতে অবাক হতে হয় যে তাদের চিন্তা ও শিল্পপ্রতিভার দীনতা কতখানি নিচে। ছোটকাগজের ভেতর দিয়ে রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক ঐক্যের জায়গাটা তৈরি করা ও কর্পোরেট ক্যাপিটালের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা যেখানে রীতিমতো মৃত্যুর সামনে দাঁড়ানো সেখানে কোনো ব্যক্তির বিরোধিতা নিয়ে থুথু ওঠানোর সময় কি আছে? আসলে ভাঁড়ারে মাল নেই তার প্রমাণ আমরা পাচ্ছি। দিনভর চাকরি করে দাম্পত্য জীবন সুখের করা কিংবা স্টুডেন্ট ক্যারিয়ার বিল্ডআপ নিয়ে ব্যস্ত থাকা কিংবা এমফিলের প্রশ্নে লিটলম্যাগাজিন করা আর কবি-লেখক হওয়ার রোমান্টিক সংকট থেকে দুটো বই পড়ে উত্তেজিত হওয়া— এই মধ্যবিত্তীয় আত্মগ্লানির বিষ গ্রহণ করতে আমরা অভ্যস্ত না। আমরা সমালোচনা গ্রহণ করবো সেই ব্যক্তির যার প্রকৃত সমাজভাবনা আছে, যোগ্য হয়ে আত্মত্যাগ আছে আর অবশ্যই সেই ব্যক্তির পেশাগত ও অর্থনৈতিক যাপন দেখে— তত্ত্ব, জ্ঞান বা বুর্জোয়া শিল্পকর্ম দিয়ে না। আর আমরা তো জানি জ্ঞান দিয়ে শিল্পকর্ম হয় না।

 


কোন মন্তব্য নেই