বাংলা সাহিত্যের প্রতিষ্ঠানবিরোধী লিটিলম্যাগাজিন ব্লগ

সাম্প্রতিক পোষ্ট

আগুনমালার পাঠ : সৈয়দ তৌফিক উল্লাহ


আগুনমালার পাঠ : সৈয়দ তৌফিক উল্লাহ


আগুনমালার পাঠ

সৈয়দ তৌফিক উল্লাহ


প্রচ্ছদ : আদিত্য শাহীন। প্রকাশক : মারুফুল আলম, প্রতিশিল্প সড়ক নং-১, বাড়ি নং-৬০, পল্লবী, মিরপুর-১২, ঢাকা-১২১৬।
 প্রথম প্রকাশ : ফাল্গুন ১৪১৭। গ্রন্থস্বত্ব : লেখক। লেখক এর আলোকচিত্র : এহসান মিথুন।
 বর্ণ সংস্থাপন : সুব্রত রায়, মিতা কম্পিউটার, যশোর।
 মুদ্রণ : প্রিন্টিং মার্ট লিমিটেড, ২৭/১১/২ তোপখানা রোড, সেগুনবাগিচা, ঢাকা-১০০০। 
মুখ্য পরিবেশক : উলুখড়, আজিজ সুপার মার্কেট (৩য় তলা), ঢাকা। 
পাঠক সমাবেশ, ১৭-এ আজিজ সুপার মার্কেট, শাহবাগ, ঢাকা। জনান্তিক, ৫০, আজিজ সুপার মার্কেট, ঢাকা।
 গ্রাফিত্তি : ৫৪ যতীন দাশ রোড, কলকাতা-৭০০০২৯।
গ্রহণদায়: টাকা ৭৫.০০, ৭৫.০০ রুপি।
মূল্য : টাকা ৭৫.০০, রূপি ৭৫.০০
আইএসবিএন : ৯৭৩-৯৮৪-৩৩-২৭৮৮-৮

উৎসর্গ

সঞ্চয় প্রথম
হাসিবুর রেজা কল্লোল

শুরুর কথন

বিস্মিত হবার বাহানায় প্রতিদিন চম্কে উঠি! সমাজ, রাষ্ট্র, পররাষ্ট্র, নীতি-রীতি'র উলঙ্গ উর্ত দেখে! থতমত খাই,
 আবিস্কার করি; মানুষে-মানুষের ব্যবচ্ছেদ! টিপাইমুখীবাধের বিকালঙ্গ চোখ দিয়ে রাজনৈতিক সমকামিতার সম্ভাবনায়
 শেয়ার বাজারে ঘোড়ার ডিম ফুটিয়ে তা'দেয়।
প্রযুক্তির চায়না প্রজনন, ফিলিস্তিনিদের স্বাধিনতা! ন্যানোটেকনলজির জল ফোঁটায়-ফোঁটায় অশ্রুঝরে। 
প্রতিবাদ, হাহাকার, আর্তনাদ, আহূতি, আমাদের অংগিকার, উইকিলিক্স অহংকারে স্বপ্নের জালবোনে। 
প্রতিদিন ফের পাশ ফিরে শুকিয়ে যাওয়া ভৈরব-কপোতাক্ষের কঙ্কাল জড়িয়ে ধরে শুই। 
কাপাকাপা হাতে রক্তচক্ষু লজ্জা আঙুল দিয়ে ছিড়ে ফেলি। আইন, বিচার, জনগণ; পণ্যায়ন ? 
ফাষ্টফুডের দোকানে লাইনে দাঁড়িয়ে বারকোড, লেবেল, নম্বর, মূল্য বদলে গিয়ে মূল্যবোধে পদ্মার শুকনো চোয়ালে লাঙল চষে; 
কার্বণচাষী! মানুষের পন্যায়ন, জটিলতার সূচক হয়ে আমাদের প্রতিদিনকার জীবনে জড়িয়ে পড়ে।
সন্দিগ্ধ সম্ভাবনায়, দারিদ্রতার মোচন ঘটুক আর নাই ঘটুক,
মূল্যবোধে মূখোর মুন্ডুটা ঝুলুক আর নাই ঝুলুক!
বন্ধ মিলের তালাটা অন্ততঃ খুলুক।
শিরদাড়া দিয়ে শান্তির আগুন জ্বলুক। কাঙালে-কাঙালে ভরা বুকটায়
আন্দোলপোতার চাপা কান্না দ্রোহে গর্জে উঠুক।
আর যারা সুদিনের মূলো ঝুলিয়ে রাখে, সেই মেরুদন্ডহীন ধোঁড়াদের বলি, বিপ্লব নেতৃত্বের জন্ম দেয় নিজের প্রয়োজনেই।
 প্রকৃতি তার নিজস্ব নিয়মে চলবেই। দূরত্ব তো একই! একই সুতোয় বাধা সকলেই, অতিক্রম তো বাহানা মাত্র। 
দৌড়-ঝাপ, লম্ফ-ঝম্প! দাগে পা পড়া মাত্রই তলিয়ে যাবে সীমালঙ্ঘনের চোরাবালিতে। 
প্রত্যেক ক্রিয়ারই সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া রয়েছে। 
শিরায়-শিরায় পূর্ব-পুরুষের সংগ্রাম চেতনার দ্রোহ নিয়ে অতঃপর আমরা অপেক্ষায় দিন গুনছি!

সৈয়দ তৌফিক উল্লাহ্
২৫৬, পশ্চিম বারান্দি রোড, যশোর
ফাল্গুন ০১, ১৪১৭।



কবিতাক্রম

৯ প্রজাতি মানুষ
১১ রাজনীতি
১২ শরীরবিদ্যা সেই থেকে
১৩ সত্য সবসময় শুভংকরের ফাঁকি
১৪ আশাখেলা
১৫ ভাগ্য লিখি আর একটা
১৬ শেষ অধ্যায় পূর্বের শেষে
১৭ উন্নয়ন
১৮ ও কাঙাল ও নদী
১৯ দুঃসময় দাঁড়াবার কাছাকাছি প্রাচীন সভ্যতা
২০ মন খারাপের রূপকথা
২১ ভাগ্যগণনা সংখ্যা
২২ দুঃখ কামান
২৩ ভিউফাইন্ডার
২৪ ব্যাধ ও ধারালো হেঁটে যায়
২৫ ঘাস খুন পর্ব
২৬ শিশু অধিকার
২৭ স্থিরচিত্র
চেতনা ২৮
কৃত্রিম প্রহর শেষে ২৯
গলদ গন্ধ ৩০
মীন রাশি ৩১
মায়া ফিঙে ৩২
নির্বাণ ঘোর ৩৩
আমরা ৩৪
কাপালিক শিহরণ ৩৫
সমীকরণ ৩৬
পাপমোচন ৩৭
লুটেরা ৩৮
বর্ষা মাখামাখি ৩৯
প্রেম ৪০
জলস্নান ৪১
তবু ভালবাসার পাইরেসি ঠেকাতে হবে গুষ্টিসুদ্দু ৪২ 
একজন ফেলানীর কান্না বনাম ভারত মহান 43
দ্যা ক্রিমিনাল প্রাকটিশনার ৪৪
আগুনমালার পাঠ ৪৮
প্রজাতি মানুষ

এপিটাফ: ১
ভালবাসার শিরায় শিরায় বিষ
ভাগ্য রেখায় একটা রেখা বাড়িয়ে শুধু নিস।

এপিটাফ: ২
অবিশ্বাস্য; অতঃপর আমরা
ঘড়িয়াল এর মত বিলুপ্তপ্রায়

যখন ঠিক সূর্যোদয় তখন বৃষ্টি ভিজে যায় বারুদে
ঘাসের শরীরে শিশিরের কঙ্কাল।
আবেগের ভর সংখ্যা তখন যোগ-বিয়োগ "এক"।

কার্বনচাষী কৃষকেরা
গবাদী পশু মোটাতাজাকরণ প্রকল্প প্রয়োগে
জীবনকে উৎপাদনের উপকরণ ও দাহ্য বাসনায়
ক্ষেতের পর ক্ষেতে কার্বন, পরমাণু। _; (ড্যাস) বোনে।
আর কাকতাড়ুয়ার চাষী?
জগৎশেঠ! হারামজাদা।
"সব নবাবের সূর্যোদয়-সূর্যাস্তের
অন্তিম কারণ হয়ে রূপান্তরিত হয়।
দেশ-কাল ভেদে, ভিন্নভিন্ন বেশে।"
আমরাই তাদের আমাদের অন্তিমতার সুযোগ করে দেই।

এপিটাফ: ৩
যুদ্ধ যদি শান্তির পূর্বশর্ত হয়
তবে যুদ্ধ শুরু হোক।

এপিটাফ: ৪
আমার মুমর্ূষর্ু আর্তনাদগুলো ছিলো অসহায়
নির্লজ্জ-বেহায়া, স্বার্থপরতার দুর্লভ কলঙ্ক ছিল
প্রত্যেকটি ছাড়িয়ে গেছে তার পূর্ববর্তী সীমা
অন্তর্নিহিত গুমোট কান্না ছিল তবুও।

নদীর মতন আমার বেঁচে থাকা
দুঃখগুলো! দুঃখের কলঙ্ক নিয়ে বেড়ে উঠে

এপিটাফ:৫
আমি তো বলিনি মানুষের কণ্ঠস্বর নেই
তবু আমার কাছে মানুষগুলো বোবা মনে হয়।
আর যদি বোবা নাই হবে!
প্রার্থিত প্রতিবাদী কই?

এপিটাফ: ৬
পর্ণোগ্রাফী কী শুধু প্রাণীর হয়! দেশের নয়!
তবে হচ্ছেটা কী?

এপিটাফ: ৭
আশেপাশে সব ছিল, গতিময় পথ
দিবাস্বপ্ন, দুঃখ, তাড়নায় ক্রোধ
উত্থিত প্রাচুর্যে মানুষের সহাবস্থান
সব...সব ছিল।

ছিলদের সব ছিল
শুধু ছিল না ছিলটা
রাজনীতি

নির্বিঘ্নে ঘুমাতে পারো, দ্যাখো বন্ধ হয় কি না চোখ
তাকিয়ে তো ছিলে অনেকক্ষণ; কী লাভ হলো।
নঞর্থক, গুঞ্জনের গান, বাসে-ট্রামে ঠেলাঠেলি করে
মেতে উঠে, ওঠোনি! ডাকোনি চিৎকার করে। তবে কেন দৌড়ে গেলে, ছুঁয়ে গেলে
দূরত্ব নির্বাণ পথ। অতঃপর সমষ্টিকে ব্যক্তিগত করে
পুরলে পকেটে। মাহাজনি সুদ কষে উচুতলায় দাঁড় করালে
নিজেই নিজেকে। চাইলেই যেন অাঁকড়ে আকাশ ধরো;
বর্ষাগুলোকে বরফকুচি বানিয়ে মদের গ্ল্লাসে রাখো।
এখন মাতাল হয়ে ঢোক গিলে নিয়ম করে নিপাত করো
আমাদের গুষ্টিসুদ্দো; ওহো, বিড়াল পোষ_না!
শখ করে এবার শকুন পুষো!!

শরীরবিদ্যা সেই থেকে

ছাই দিয়ে আদমের হাতে ধরে
ঈভের শরীর ধরতে শেখা।
নোনতা ঠোঁটের খাঁজে ঠোঁট রেখে
সেইতো শুরু আগুনে বেঁচে থাকা।

পাহাড়, সাগর, নদী, গিরিখাদ
সদ্য নখের খোচা দম বন্ধ করে
লেপ্টে থাকা আট-কুঠুরি নয় দরোজায়
পলি জমা নিংড়ানো মাটির দলার আহুতি।

ঈশ্বর অতঃপর কৃপা করলেন
আন্দোলিত, মাটির দলাগুলোর প্রার্থনা দেখলেন
আর অনাবাদি ঈভের শরীরে আদমের বীজ পুতে দিলেন।
আরো অজস্র প্রার্থনায় প্রতিদিন
অসংখ্য আদম ও ঈভের পুনরুত্থান ঘটান।


সত্য সবসময় শুভংকরের ফাঁকি

উপত্যকার প্রবেশ পথের দুপাশে দুটো কবর
চারপাশে ছড়ানো আরো কয়েক হাজার কবর। স্মৃতি
আর যাদের কবর জোটেনি ভৈরবে তাদের পিণ্ডিগাথা
আজ অসংখ্য মোমবাতি, প্রদীপ; আজ অমাবশ্যায়
জোনাকহীন অাঁধারের ফাঁক দিয়ে ডরে কাঁপে।
বাস্তুহারা নদী এ শহরে বোঝা হয়ে
হাজারো পিণ্ডির মানুষ শরীরগুলো
ধুয়ার কুণ্ডগুলো সরীসৃপের মতো ছাড়ে।

আমরা সবে সন্ধ্যেয় প্রবেশপথ মাড়িয়ে
ঢুকলাম আগুন উপত্যকায়। সাপের খোলস মাড়িয়ে
পথ হাটলাম। স্বপ্নের ফাঁক দিয়ে ফোকর গলে
মলা-ঢেলা-চেলা মাছগুলোর শুটকি হয়।
আশাখেলা

নিশ্চিত করে বলি কিছু একটা হবে
বদলে যাবে নড়বড়ে চেয়ারের পায়াগুলো
ঘরের চুনকাম, রান্নাঘরের মিটসেফের দরজা
কার্নিশে পরিকল্পনাহীন মাকড়শার জাল, ঝুল-ময়লা।

উচ্চ রক্তচাপের জন্য লাগবে না নুন ভাজা।

নিশ্চিত করে বলি একটু ভরসা রাখো
নতুন জুতোর চোয়ালের মত চকচকে সুখ
বিষণ্নতা বানানের দুঃসহ গিঁটগুলো
সরল অংকের মতো উত্তর মিলবেই।
বিজয় মিছিল ফিরে ক্লান্ত স্মৃতিগুলো
বিলাসিতার শর্টকার্টে? পুঁজিবাদ!

বিস্ময়তা! রিসাইক্লিং কার্বন নিঃসরণ
গ্রীণ হাউজে বেড়ে ওঠা লতাগুল্ম
আলসেমীর মন্ত্রপুত রিমোর্ট হাতে
দূর-হতেই দূরত্ব পেরিয়ে যায়।

নতুন একটা ব্যাখ্যা লাগবেই
ব্যবচ্ছেদ হবে বায়োলজির অবিশ্বাসে

যদি বিশ্বাস করো
নিশ্চিত করি বলি সুখি।


ভাগ্য লিখি আর একটা

হেয়ালীটা বড্ড ভুলেছি, ভুলেছি কত অভিমান
শিয়ালকাটা, হরিহরের স্রোত, অদম্য ক্রোধ

এখন বড্ড প্রফেশনাল
অনুভূতির দাঙ্গাবাজি, সাপলুডু, হা-ডু-ডু
শুধুই দু-দুগানি চার। তিন দুগানি ছয়। ষোলো। আঠারো
নতুন নতুন ব্যাখ্যায় শুধু উন্নয়ন সূচক। মাপকাঠি অব্ সুখ
অবভিয়াসলি অর্থনীতি।
এর মাঝখানে দেখি না কোন সুখ।
বিবেক! বিভেদের ছন্নছাড়া
ওটাকে পুষে লাভ কি?
এর চেয়ে ডাইনোসার পোষা সহজ।

টাকার গন্ধ! দ্যা পারফিউম ফরম হ্যাভেন।
সত্য-মিথ্যা! সিনোনিয়াম খোঁজা তোদের অভ্যেস
তার চেয়ে ফের বসন্তে মরিশাসের সৈকতে
আরামকেদারায় শুয়ে কর্পোরেট সমুদ্র দেখা ভালো।
শেষ অধ্যায় পূর্বের শেষে

তখন মধ্যরাত। ব্যবচ্ছেদ হতে হতে ক্রমশ হাড়ের শরীরে
মাংসের লাল ক্ষত চিহ্ন। জটিলতার ক্রান্তিকালে সেচযন্ত্র দুর্বিপাকে।
ফসলের মাঠে ঝরে পড়া হলদে সর্ষের ফুল। শালিকের লাশ।
অমসৃণ মাটির ঢেলার পাশে বাবলা কাটার ডালে গোখরার সদ্য
ছাড়া খোলস। তবু থেমে নেই ঠাসা বুনটের ভিড়ে শিরায় শিরায়
অদম্য চিৎকার।

বিশ্বাসের পাঁজরে ফুটো ক্ষত। বিস্মিত হবার তাড়না
আমন্ত্রিত সব ক্রোধ। উঠানে শুকাতে দেওয়া সশস্ত্র রোদ্দুর
হতবাক হতে হতে নিসংশয় যুদ্ধবাজ
পিপাসা মেটাতে ইচ্ছের তৃষ্ণা
ব্যবহৃত অনিচ্ছার ঘূর্ণিপাকে
দুঃখ ফসিল।

অবশেষে জয়। হোঁচটে ক্ষত নখ। বিক্ষত চোয়াল
দেয়ালের পর ইচ্ছের দেয়াল। পতাকার দণ্ড
বিস্মিত হবার পর্ব শেষ করে বিস্ময় গড়ে তোলে
বিজয়ের কারিগরি প্যাকেট ভর্তি জ্যোৎস্নার ফুল নিয়ে
বসন্তের সুতোয় বেঁধে। সূর্যমুখি ওড়ে

অতঃপর জিততে শুরু করে। এই ভোর হতে।



উন্নয়ন

বিচ্ছিন্নবাদীদের মত স্বপ্ন দেখি
আমি ও বিচ্ছিন্ন হই
বিচ্ছিন্ন হতে হতে পেঁৗছে যাই শূন্যে কোথাও!
এ বিচ্ছিন্নতা কেন্দ্রমুখীনতার
এ বিচ্ছিন্নতা শূন্যতার।
শূন্যস্থান পূরণ করে করে স্বপ্ন বানাই
স্বপ্ন থেকে যখন বিচ্ছিন্ন হই!
হাহাকার, আর্তচিৎকার, শীৎকার, দ্রোহ
টিপাইমুখী বাঁধের মত গলার কাটা
সরীসৃপের মত শরীরে নড়াচড়া করে।
আমরা তখনও স্বপ্ন দেখি
আমাদের যে দেখতে হয়!
ও কাঙাল ও নদী

বাহারি রঙের সাজে আঁকিয়ে প্রকৃতি বিষমাখা শিরে
পড়ন্ত শিশির বেলা বালিকার নাভিমূলে
জেগে থাকা সারিসারি ফাটা চৈত্রকাল মাটিতে ক্ষত
শুকিয়ে যাওয়া ঘাস না ফোটা ফুলের দল অপেক্ষায়
হাহাকার পূর্ণ জনপদ, উপকূল বিষাদে বিষণ্ন হয়।

স্রোতহীন নদী ভরে ওঠে পোঁড়া মানুষের হাড়ে
নিঃশ্বাসের অভাবে মৃত প্রায় মাছগুলো খাবি খায়
থকথকে আঠুলে কাদার দলা, কুৎসিত গন্ধে নদী,
নদীর উপর দিয়ে শকুনের যাতায়াত বেড়ে চলে।


দুঃসময় দাঁড়াবার কাছাকাছি প্রাচীন সভ্যতা

মুখোমুখি মুখোশের আধুনিক নাগরিক
প্রাচ্য প্রাচীনের ফারাক কেমন জানি আদিম
আমরা হাঁটতে হাঁটতে গোলক চিত্রে
ক্ষুদ্র মানচিত্র আঁকি, মানচিত্রে
কালদাহ নেই আকাশের কাছে।
হাইব্রিড মাটি নেই, বায়ুমণ্ডলে নেই কোন
নিউক্লিয়ার অশ্রু।
থৈ থৈ করে মানবিক সুখ আপামর

অথচ হোঁচট খাই ইতিহাস অস্ত্রে
অথচ হোঁচট খাই জীর্ণ সবুজে।

এ গ্লানির ভয়ে মুখ লুকাই নিজের চামড়া ছিঁড়ে
চর্ম রুগী ত্বক গলে পচে ঝুলে পড়ে আঙুলের ভাঁজে
মহাকাশ জ্যামে আটকা পড়া আলো ছাড়া পাবার
পর মুখ দেখি একে অন্যের কী বীভৎস
আর ভয় গ্রাস করে, তীব্র বাধা পায় স্বপ্নে।
আমরা পালাবো কোথায় বলতে পারেন?


মন খারাপের রূপকথা

আহারি চাবুক সপাং ছলাৎ কৃষকপীঠ
কালচে রক্তাক্ত চিহ্ন চামড়ার স্বাদ ছিলে
উড়ে পড়ে শূন্যে আবার ছলাৎসপাং চাবুক নেমে আসে
অনুভবের ডগায় পেঁৗছে যায় বার্তা ব্যথার।

উত্তরসুরী কৃষক ঘুমে ভেসে ওঠে সেইসব স্মৃতি
নোনা আদলের পবিত্র পূর্বপুরুষ
তোমাদের গন্ধ হাহাকার তৃপ্ত উদরে খরা
প্রান্তিক কৃষক টের পায় বর্তমান উত্তরাধিকারে।

অনাহারী চাবুক সপাং ছলাৎ কৃষকপীঠ।

আমাদেরও পিঠ পেতে আছে
চামড়া আর চাবুকের দিকে।
ভাগ্যগণনা সংখ্যা

ঘূর্ণায়মান আমাজানের বাঁকে বসানো সেচ যন্ত্র, দাবানলে
বিপথগামী মন্ত্রপুত ভাবাবেগ রাঙ্গামঞ্চে
আগুনপন্থি বাঘ, চুলওয়ালা সিংহ, মাড়ির দাঁত ভাঙা ইঁদুর
পৃথি্বরাজের সিংহাসন পায়াগুলো ঘিরে বসে, পানি বিন্দু রূপ
বদলে দিন গোনে। বিপ্লব বলে রটে ছিল। প্রতিশব্দ মুনাফা
ধরাতে কার কি এমন ক্ষতি
ডানাকাটা পাখি উল্টোপায়ে শেকল পরা, উড়ে যায়
বাচ্চাদের নিয়ে দানবের হাত ধরে, অন্ধ ভৃত্য রাস্তা পার হয়।
ব্যক্তিগত কসাইখানায় মানুষের আত্মা, মানুষের মাথা অনবরত
কুপিয়ে চলে কাটাহাতের কসাই। লোহার হুকে টাঙানো জিহ্বা
ভাগ করা ঘিলু-মাংস, চোখ, আঙুল চুষে খায় মঞ্চের সভ্য
মানুষ চামড়ার ঢোল বেজে ওঠে।
রক্ত যন্ত্রণার সবটুকু ভেসে যায় নর্দমা-নালায়। সেচ যন্ত্র
ঘুরতে গুরতে শেষকালে মুণ্ডুগুলো চিবিয়ে খায়। দাপটে মন্ত্র
খণ্ড খণ্ড শরীর ছুটে বেড়ায় আরও মুণ্ডুর খোঁজে...


দুঃখ কামান

ঐ মেঘ পালঙ্কে মৃতু্য, জড়তা, ক্লেদ বিছানার পথ
কাতর্ুজে ঘেমে ওঠা চর্বি, জন্মাল, বারুদ বারুদ খেলে
শিসা পাত্রে রণবার্তা বের হয় বন্দুক নলে
থেমে থাকার বৈভব, বিত্তজড়ায়ে ক্লেদ বিছানোর পথ।
বেড়ে ওঠা পাতা শৈশব শিকড়ে-বাঁকড়ে শরীরে
ভিড়ের ঘ্রাণ প্রশ্ন ছড়ায় গাছের লতায় মাতম আদলে
বেদনার বাঁশি ঝরা ছায়া নড়া রোমকূপ জ্বলে
দ্বিপ্রহরকালে বুভুক্ষু যাতনা ভয় করা গালিচার
আলতো আকাশী ঝলক, শুকনো ঠোঁটে রোদ করে জমা।

জৈন পুরুষ, নিশিগাঙের ঘোলা জলে ডুব সাঁতারে
আঁকর-বাঁকর সভ্যতা আদলে, ভূমণ্ডলের-'জু'
অবসাদে পৈতে, জন্মাতে ঠাকুর কোষ্টি
দেবতার রূপ পায় বাউল সৃষ্টি, সুরের মিছিল নিয়ে,
ট্রিগার উত্তেজনা চাপা দেয় দুঃখকামান
পিচ্ছিল মরু ঘাস, ক্যাকটাস আবরণ, লোমশ নখেরা
যখন তখন আঁচড় কাটে চামড়ার ললাটে।
ত্রাণে প্রকৃতি, খোলা উঠানে মাদুর পাতে
ছাই উড়ে পড়ে। কারও না কারো বাড়া ভাতে।


ভিউফাইন্ডার

পা'তে পায়ের আঙুল, নখ, খুচরো দাড়ি-গোঁফে ব্যাকব্রাশ
চিবুক, থকথকে কপটহীন শরীর স্পর্শিত শিরশিরে তলা
হেয়ালী মুখর ক্ষীপ্র অপলক পাপড়ি বহমান মানুষ কথা

চোখের সানসেট সূর্যতলায় কেশজ ছায়া
কপালদাগের ভাগ্যরেখায় কাটাকুটি খেলা

যেখান থেকে নাক, নাকের সুড়ঙ্গ পথ ধরে
কিছুদূর এসে দুপুর গড়ায়ে সন্ধ্যারা নামে
কর্ণিয়া স্তরে সাদাকালো ভেদ মিলে মিশে

গাদাগাদা সকালের রাত হয়
মানবের একজোড়া ওৎপাতা চোখে।
ব্যাধ ও ধারালো হেঁটে যায়

ছেঁড়া চটির বুক পকেটে পেরেক ফোটে।

উল্লাসের এত রূপ
আবির্ভাবে এত কল্প
উত্তরণের এত গল্প
শিশিরে, শব্দে, উনুনে-আগুনে।

ফেরারী শার্টের আস্তিনে লুকিয়ে থাকা
জন্মদাগ-আঙুল তুলে দেখায়।

অতিক্রমের ক্রোশ ক্রোশ সীমানা।


ঘাস খুন পর্ব

ভেজা রোদে ভাঙে উলঙ্গ মুখ মেঘ
ধুধু সারারাত আদিম আলোড়নে একা
তারাগুলো খসে পড়ে একাকীত্বের এক এক রাতে
স্পর্শ আঘাতের দরজা ধিনতাক্ তাক্ ধিন বন্ধ হয়।

উদোম কপালে কাপালিক কৃষ্ণ কৌরব নৃত্যে
মিছিলের ফসিলে পাশ ফিরে শোবার শব্দ
শুকনো জবা? সে তো পড়ে আছে
গোয়ালের খড়ে নদীর শরীরে।

মাছের চোখে জোয়ার-ভাটা_ দুধের থালায় বিড়াল
চুক-চুক চাটে ঘাসের গায়ে খুনি ও খুনের রক্ত


শিশু অধিকার

বস্তুত সে অন্ধকারে কেঁদেছিল
চোখ দুটো বাধা ছিল লাল পতাকার আবরণে
হাতে লাল আলোর মশাল নিয়ে
ভ্রমতন্ত্রে মুক্তির বিস্বাদ লেগে ছিল
কপালে দ্রাঘিমা রেখা আকারে ভগ্নাংশ।

তবুও আঙুলে আঙুলে বিকর্ষণে
ছিঁড়ে ফেলি জরায়ু নাড়ী।

উদ্বাস্তু শিবিরে আহত কাকেরা আর্তনাদ করে
গরম ভাতের মাড়ে পুড়ে যাওয়া চামড়া নিয়ে কুকুরের দল
মোড়ের পোস্টার আধো নিভু বাতির আলোতে
পিছুটান নেই এমন উলঙ্গ ড্রেনে পড়ে থাকা
ছ-মাস বাচ্চার লাশ ঘিরে থাকে।


স্থিরচিত্র

সবকিছু ধোয়ায় আচ্ছন্ন, গতিময়।
রঙিন সূত্রের মুখোশ অনেক বেশী বেমানান
আস্তে আস্তে আলোর দঙ্গল
দাঙ্গায় মেতে ওঠে হারানো শহর।
পুরোনো পথেই ফিরে আসবে সময়
গ্লানির দুপুর শেষে কিউরেটরের ফিকে চশমার কাঁচ
আলো আসবেই আলো আসবেই
কার্ণিশে জ্বালবো না মাকড়সার শ্রমে।

রাণী পিঁপড়া বড্ডো ক্লান্ত
নিরোর শহরে নতুন বিউগলের বাজনা
মধুসূদনের ধর্ম বিভ্রাট এর মতন ধোয়াটে স্ফিংস।
পরান ছ্যাচা ক্রোধ জাপটে ধরে কচুর পাতায় জল।

স্রোতে অনাবৃত নারীর পণ্যমুখী প্রেম
পাতানো রোদে উষ্ণতার হাতছানি
ফিসফিস করে ডেকে ওঠে দাঁড়কাক।
সঁ্যাতসঁ্যাতে শ্যাওলা মাখানো পাচিলওয়ালা বাড়িটা
অনেকগুলো নড়বড়ে দাঁতের মতন জানলার গ্রিল নিয়ে
মুখের পর মুখ দৃশ্যের পর দৃশ্য
চেতনা

পাপের পেছনে বাঁশির বৈরাগ্য যাতনা
দ্বন্দ্বে-দম্ভে ভালমানুষ বেঁকে বসে
ভুলে যায় ভুলবার বীজমন্ত্র।
অনাবাদী ক্ষেতে ফসলের আগায় আগাছা জন্মে
সেচের অভাবে বুকফাটা ক্ষরা। আদ্রতাহীন মাটি
ক্ষুধার্ত শকুনের মত বে-আব্রু হয়।

ফলবতী ফসলেরা ভ্রূণতে ঘুমায়
কার্বন-চাষীরা স্বৈরাচারীর মুখোশে মুকুটে রাজা
বর্গাচাষী কৃষকের চোখে সর্ষে বীজ বোনে।


কৃত্রিম প্রহর শেষে

কে কার আগে ধরাবে আগুন আঙুলের মলাটে
নিজেরাই নিজেদের ঠোঁটে চুমু খায়
নোনতা চামড়ার স্বাদ জিভে জড়াতেই
আড়ষ্ট ঢেউ খেলে উসকে ওঠা দেহে

চুমু খাই-চুমুক দেই।

সর্বনাশে থেমে নেই অভিনয়, থেমে যায়
রক্তাক্ত ফিল্টার, শুষে নেয় কালশিটে দাগ
ফেলে দেবার পর গাঁদা ফুলে ভরে যায় এক হাত
উড়ন্ত বাঁকে তবে কার জন্য জেগে থাকা

আলো চাই_ আরো আলো
যুদ্ধাহত রাত্রে আবার জেগে ওঠা
জ্বলন্ত লাশের নিঃশ্বাস ফুরাবার পর
সদ্য লেখা কবিতা, ব্যবচ্ছেদ আহ্বানে এগিয়ে আসে

চুমু খাই_ আলো চাই। ভাঁজ খুলে
টুকরো টুকরো করে আজ জমান থাক
শুরু হোক অদেখা পৃষ্ঠার নতুন হরফ।


গলদ গন্ধ

ভস্ম ফ্রেমের ভাঙা অংশ পালক চোখের
পাতায় মুড়ে রাত হতে ধার করে আলোতে
ছায়া পড়ে অর্ধেক জমানো ফাঁদ
বাকি অর্ধেক কাজল মেখে থাকে
ইশারাতে দেখাদেখি অনেক্ষণ তাকান হাসি
তীর্থ পাপের দণ্ডে কুটুম কাচের খণ্ড
লোমশ নখ শান দেয় ইস্পাতের ডগায়।

জরায়ু ফুলে শিরোনামহীন বসন্ত
ডুবানো স্রোতের ছোঁয়া টের পায়।

মাছরাঙা-১, ছোঁ দিয়ে ছুটে চলে
মাছরাঙা-২, অন্য জলের ডালে
শিকড় ভেঙে পালায় পেছনের বয়স্ক মাছ
ঘরে ফিরে খাবি খায় ভরদুপুরে।

কংক্রিট উনুনে নেভানো ছাই ভিজে কান্নার
মন্ত্রে কালো মেঘ ছুঁড়ে ফ্যালে।
অবশিষ্ট রোদ ভাগ হয়ে যায়।
মীন রাশি

বিশেষ কিছুর জন্য বিশেষ কিছু দরকার
অবিরাম গতি, যন্ত্রণা, নিঃশব্দ ভয় এবং একাকীত্ব
যেমন বর্ষা, বৃষ্টির মতন বসন্ত
গাণিতিক সংখ্যা তিন (০৩)।

ব্যাথার প্রলেপন মজে ওঠে কান্নার রোলে
ঘাসে ভেজা রোদ, আমার তোমার চোখ
বাধ্য হয়ে দেখে আবেগশূন্য
ঈশ্বরের কার্যকলাপ।

মায়া ফিঙে

ন্যাতানো রাতের রুদ্ধ বেলাতে ভোর
সুপ্ত নিশুতি পুরোটাই চেয়ে থাকে
আর জ্বলছে না আলোর সল্তে পুড়ে
আলতো ধুলোর রাশি ঘুমদের ঘরে
শিশির দ্বন্দ্ব ক্ষীপ্রতা তেড়ে যায়
আনচান করে সারাটা সময় যায়
স্বপ্ন বেলাতে ফিরে পাই দিনগুলো
প্রতিদিন যাই রাঙাতে বাসনা ধুমে

রঙিন দিনের চকমকি রোদ ঝরে
উল্টানো রথে আঁড়াল আঁকছে চুমু
পানপাত্রের চুমুকের ঘ্রাণে সুখ
বাহবা জানায় মায়াবী ফিঙের বোল
আচম্কা পুরোটাই হারানোর প্রাণ
সুর তোলা স্বপ্নালু জুয়োদের দান।

নির্বাণ ঘোর

প্রতিদিন কার ভাল লাগে মাতাল হয়ে ঘরে ফিরতে
যার হাসিতে খুন হবার কথা ছিল
সে আমায় খুনি বানাল খুন করাল, আপন আত্মা।
জলজ চোখের কাকুতি ভাঙল নিখাদ নূপুরে
প্রতারক স্মৃতি পথভ্রষ্টা মরীচিকা হয়ে দাদন দিল
মাহাজনের সুদের খাতায় নাম উঠলো আমার
আমি ফেরারী না হয়ে হলাম জুয়াড়ী আত্ম-ফেরারী।
জীবনের নাড়ীতে অচেনা ব্রান্ডের রক্ত
বুকের ধকধকানীতে পরিচিত মুখোশে অপরিচিত মুখ
বদলে যাচ্ছে একে একে দিল মেশিনের নাট-বল্টু।
পার হচ্ছি করছি শতাব্দীর পারমাণবিক সময়।

এখন কবিতারা বন্দুক হতে চায়
এখন প্রেমে এঙ্পায়ার ডেট থাকে।
আমরা

আমরা সীমাবদ্ধ আমাদের আঙিনাতে
শার্টে-কলারের কাছে জাগতিক বোতাম
বোতলে বেদম তৃষ্ণাজল ছিপি আটা মুখে
গর্ভঘরে নারকীয় আহ্বান, কেন'বা এলাম!

আমাদের সকল উৎস শক্তির জ্বলন্ত মুখে
গোধূলী শীৎকার আর ঘাসের মতন
সফেদ বকের ডানা ডলফিনের কান্না হয়
আমরা কাঁদিনি অথচ কান্নার মত কিছু ছিল

আমাদের ডানা আছে
উড়বার সাহস নেই শুধু।
আমাদের স্বপ্ন আছে
দেখবার চোখ নেই শুধু।

কাপালিক শিহরণ

পুরুষবন্ধ্যা সময় আলোকিত রেখেছিল চারপাশ
ঢোক গিলে গিলবার পুরোটা চাঁদ অপেক্ষায় মেঘ
অবুঝ নাবুঝে গন্ধ থেকে ঘ্রাণ নিই শুঁকে
পাললিক পলি পড়ে জমে থাকা আণবিক মনে।
আকাশে উঠোনে পলাপলি ফর্সা মেঘ কালো মেঘে
পুরোহিত প্রাণে সুবাতাস পাপ শাবক বটের ফাঁদে
অসমতল মাটিতে ঘাস সামনে জলের খাল,
খাল থেকে নদী, নদী থেকে বিল, বিল থেকে মাঠে-ঘাটে
কিছুক্ষণ এভাবে ভেসে
চাঁদের চৌকাঠে রূপালি আলোর হাঠে।

বেশি প্রাকৃতিক হতে হেঁটে যায় খাল পাড় ঘেঁসে
পা'রাখি ডোঙায় ঢেউ নাচা গান জলজ কাঁপুনি
চারপাশে দুইকূলে এই বুদ্ধ পূর্ণিমায় চেটেপুটে
বিপথগামী সময় গ্রাস করে পেঁৗছে দেয় নীড়ে
অভিশপ্ত লাঙলের ফলা ঘুণ ধরে আত্মচাষী ঝড়ে
নিজেকে নিজের প্রকৃতির ফেউ মনে হয়
নিজেকে চেনার রূপ পুরোটা অচেনা রয়।

সমীকরণ

গলিটির মোড়ে বৃদ্ধ বটে বয়ঃসন্ধির আগাছা জন্মে
জবুথবু ঝুড়ি মাথায় লোকটি প্রায়ই দাঁড়িয়ে থাকে নীচে
কখন পাতার শিরা-উপশিরা খসে পড়ে
ঠিক তার ঝুলে থাকা চোয়ালের মতন করে
চশমার কাচে ঝাপসা হতে থাকে বিকেলের রোদ
বুড়োটি হাতের তালুতে নস্যির কৌটা খোলে

ওদিকে বৃদ্ধবট মায়া চোখে বুড়োকে দেখে
দেখতে দেখতে চমকে ওঠে দুজনে।

পাপমোচন

হিমশীতল শয্যা ঘর, পালঙ্কের মুঠোয় দু'ফুটা ফুল
সীমানার কার্নিশ চুঁয়ে, অন্তঃর্দ্বন্দ্ব নাবিক নকশা আঁকে কাটে
সুখি জৌলুসের নাটক, আকাঙ্ক্ষার বাইরে ছাড়া পায় না।

পাক না পাপ
মোচনের অংশিদারিত্ব।

সাড়ে তিন হাত বাই সাড়ে তিন হাত
ছোবলের বৃদ্ধ ভয়, ভর করে।

পাপমোচন পাপে...

লুটেরা

সর্বগ্রাসী আকাশে কালো ছায়া কালো মেঘ
সবাই লুটেরা রক্তে নেশা রন্ধ্রে রন্ধ্রে
পিষ্ট পদাতিক মুজুরের হাতুড়ি-বেলচা
নিচ্ছিদ্র গ্রামে ডুবে যায় অফুরন্ত সম্ভাবনা
নিভে যায় দম্ভে দাম, দলিত-গলিত ত্বক।

সব সুখ লুটে। সব দুঃখ পুটে
লুটোপুটি খায় কামারের কয়লায়।

লোমশ পাঁজরে ক্রমশ শান্তি
শয্যায় বিছানা আদুরে ক্লান্তি।
উবে গেছে কোথা, কোন অজানায়।

মাটি থেকে ঋণ করে লুট হয় আগাছারা
শিকড়ে পেশীবহুল হাত কাটা পড়ে
লুটের নেশায় সর্বনাশ।
অথচ শিকারীর আশ্বাসে বিষ-ক্ষত,
ঋত সকাল পবিত্রতার আশেপাশে কেউ নেই।
দানবিক মঞ্চে পাপ পুড়ে পাপ হয়!
বর্ষা মাখামাখি

দেখেছি তারে সর্ষে ক্ষেতের আলে বর্ষায় ভিজে,
চোখ ও পাপড়ি বিন্দু-বিন্দু জল গড়িয়ে, ঠোঁট বেয়ে, চিবুক ঘেঁষে
কেঁপেছিল শীত নিজেকে জড়িয়ে ধরে, চা-পাতি রঙের শাড়ি আঠুলে কাদা মেখে
চটির ফিতে ছিঁড়ে যেতেই ছুঁড়ে ফেলে দিলে তাকে;
নগ্নপায়ে নূপুর ছিল না, তবু মাটির ছোঁয়া পেতে,
বুকের সবটুকু নিক্কন হয়ে, বাঁজালে কাশফুল দিনে।

আমি তো ভেবেছিলাম বর্ষা হবো, তার নাকে মুক্ত হয়ে জমে যাব,
ঠোঁটে গড়িয়ে পড়ব। কিন্তু যখন তুমি কাঁপছিলে,
উষ্ণতা পেতে হাত বাড়িয়ে দিলে, তখন বড্ডো সাধ হল উষ্ণতা হবো;
আরো কত কি ইচ্ছে হল; ক্ষেতের আইল হবো
যে পথ দিয়ে নগ্ন পায়ে হেঁটে গিয়েছ, সে পথ হবো
ভেজা শাড়ি হবো, হাতের চুড়ি হবো, কত কী...
ভাবি, এ বর্ষায় আজো সে কি ভেঁজে
আজ কি সে খালি পায়ে হাঁটার স্বপ্ন দেখে

আমি দেখি, তার সাথে তবু ভিজি; উষ্ণতা পেতে
জড়িয়েই তাকে ধরি! সে কি ভেজে না, সেকি জানে না!

ভিজতে-ভিজতে আমাকে ভিজিয়ে ফের চলে যায়

আমি তোর লাগি বসে থাকি সর্ষে ক্ষেতের আলে
সে আসবে, সে ভিজবে, নগ্নপায়ে আমার দিকে
দুটি হাত বাড়িয়ে বলবে, 'তুমি ভিজবে না!'

প্রেম

প্রেমকে প্রেম আর প্রেমিকাকে প্রেমিকা করে সারা জীবন পেতে চাইতে।
বউ খুঁজে আনতে বলি প্রেমিকাকে। সে কি রাগ তার;
প্রেমিকা যদি বউ হয় তবে কি প্রেমিকা থাকবে সে?
দাম্পত্য ঢুকে যাবে প্রেমে। যাই বলো ভাই বউ কখন প্রেমিকা
হয় না। প্রেমিকা বউ হয় না। বউতো বউ-প্রেমিকা তো প্রেমিকা।

আমি বলি প্রেমিকা। বর খুজে দেব তোকে। আমরা
সারাটা জীবনের প্রেমিক-প্রেমিকা হবো। দুজনেরই বউ হবে।
বর হবে। সংসারও হবে। প্রেমও হবে

জলস্নান

ছুঁই ছুঁই বলে ছোঁয়া হয় না
ছুঁতে পারে না মন দিতে দেয় ছুঁতে-না
আলোক ঋণ জড়ানো ওড়না চুয়ে গড়িয়ে
টুপুস-টাপুস জল স্নানে জল চুমু

ছঁ্যাদলা পড়া রোদ সিথানের ভাজে ছড়িয়ে পড়ে
ঘুম মেঘ রাঙিয়ে দে নিড়ানী বাসি চুলে
এভাবেই চোখ তাকিয়ে অনেক্ষণ
ছঁড়ে দেয় শরীর সমস্ত পোশাক

জল গড়িয়ে জল হয়
টুপুস-টাপুস জলস্নানে জল।


তবু ভালবাসার পাইরেসি ঠেকাতে হবে গুষ্টিসুদ্দু

অতঃপর দীর্ঘশ্বাস!
সীলগালা আটকানো সম্ভব নয়।
কাঁটাতারের বেড়া অথবা প্লাটিনামের বাঙ্কারে!
হিলিয়াম ভর্তি বেলুনে পুরে অথবা
কনডমের লুব্রিকেন্ট মাখানো প্যাকেটে উদ্ভট।
তবে কি সম্ভব নয়। সম্ভব নয় সুইচ ব্যাংকের লকারে
গিগাবাইট-টেরাবাইট ফন্দি ফিকিরের পাসওয়ার্ড দিয়ে।
কোমল পানীয় বোতলে পুরে। নাহ!
ইউরেকা এফিডেভিট করে রাখব।
হেসো না এটা হাসবার কথা না।
প্রয়োজন হলে সরকার নিয়োগ করবে
কপিরাইট অফিসার।
মানবাধিকারের তালিকায় যোগ করবে
প্রেমিক-প্রেমিকার ভালোবাসা কপিরাইট অধিকার।
জন্ম নিবন্ধনের মতো নিবন্ধন করবে ভালোবাসার
আন্দোলন হবে। হরতাল হবে
এটা না হলে প্রেমিকেরা ফুল কেনা আর প্রেমিকার।
টিপ পরা ছেড়ে দিবে।
আর যদি ভালবাসার পাইরেসি হয়।
ফ্লেঙ্েিলাডে বিক্রি হয় হৃদয়ের ফটোকপি? সস্তায়
প্রেমিক-প্রেমিকার জিনোনিয়াম মানচিত্র?
পূর্ব ভারতের মতো দাগকেই পাকিস্তান-বাংলাদেশ।
তবে হোক শুরু হৃদয়ে মুক্তিযুদ্ধ।


 একজন ফেলানীর কান্না বনাম ভারত মহান
 

বাংলাটা ভাগের মতো ফেলানীর বুকটা ভাগ করে
সকালে শিশিরে রক্ত ফোঁটা নিরাপত্তার যন্ত্র হয়ে
মানব কলঙ্ক নিয়ে পুবের আকাশে নতুন সূর্য ওঠে।

ফেলানীর লাশ ঝুলে থাকে ভারত সীমান্তে কাটাতারে!

বাঁচাও! বাঁচাও! সম্ভ্রান্ত জাতির কাটা হাত থেকে
নিখুঁত নিশানা নিয়ে ওরা মানুষ ধরার ফাঁদ পেতে থাকে
ওৎপাতা মানবাধিকার ! বুকপাতা ফেলানীর শরীরে বিধে

ভারতের নিরাপত্তা নিশ্চীত নিশ্চয়! বাহবা পেতেই পারে!!!

ফেলানীর লাশ নিঃশ্বাস ছাড়ে গণতন্ত্রের ঘাড়ে!
আবশেষে ভোর বোবার মতন খুনের সেই দৃশ্য চাটে!!

দ্যা ক্রিমিনাল প্রাকটিশনার

ইনকাল্পেটরি: ১

সম্ভ্রান্ত খুনীদের মত খুন হলাম। করলাম
আমার রক্তস্নাত চোখের আগুন আভা
দুর্বিষহ দুর্দিনের মত অত্যাচারিত হল
পেশাদার কসাই এর টেবিল।

দুর্দান্ত সে জ্বালা সে ঘ্রাণ সে উন্মাদনা
পুড়িয়ে দিল পাপ আর পা রাখলাম সেই পাপে

আমার মুক্তিও হলো।

আগ্রাসনে অন্ধকারগুলো খুবলে খায়
আফিম উন্মাদনা উড়াল আট কুঠুরী নয় দরজায়

পুড়িয়ে দেয় মাতাল রোদ মূর্তমান প্রতীক্ষা
ক্ষত-বিক্ষত মাঠের পর মাঠ জলামুখী নদ
আর কৃষ্ণচূড়া রঙ দ্বিধাহীন ভাবে।
তাড়িয়ে দেয়। পুড়িয়ে দেয়। জড়িয়ে দেয়।

নগ্নতা শোকে ছোবল বিদ্ধ শরীর
নাগিনীর ফোসফাস উদভ্রান্ত জ্বলশ্বাস
নিঃশ্বাসে জড়ায়ে কপালে জমে ওঠে ফাংগাস
ঝিনুকে কাটা পায়ের পাতা।

নখ গড়িয়ে রঙিন ঘামের ধারা
বুকির মধ্যে দাউ দাউ করা আগুন
পরিচিত জনপদ পরিচিত মানুষ।
ছায়াহীন সরীসৃপ বুকে ভর দিয়ে হাঁটে
কাটা জিহ্বা রক্ত সমেত চাটে।

ইনকাল্পেটরি: ২

আজকে প্রহর সময় অসময় ঘুরি
আমাদের দু'খান ছায়। নেড়েচেড়ে ফিরে
থাকল না কিছুই যখন নিজস্ব করে
জমানো চুম্বনগুলো কারো কারো ঠোঁটের কিনারে কার্নিশে ঝুলে
অস্পষ্ট ক্লান্ত ঝুলকালীতে মাখামাখি।
উষ্ণতা। সেই যে তিল তিল করে গড়া এখন সে
পাপড়ি বন্দি চোখের কাচের বোয়েমে।
হৃদয়টা ভাগ হয়ে গেছে কাঙালী ভোজের মত
ক্ষুধার্ত হিংস্র শকুনী নখের ক্ষুরে।

নিজস্ব বলতে এখন অস্থিরতা রি-ক্যাপ,
আঁকাবাঁকা পথে কামনার গুমরে কান্না অভ্যাস
ভাগ দেব না, ভাগ হবে না
সংসদীয় সভ্যতা যাই বলুক।

ইনকাল্পেটরি: ৩

পুরুষগুলো এখানে ব্যাঘ্র তারুণ্যের দম্ভে দর্পে
প্লাস্টিকের ছুঁচলো নখর, ব্রঙ্কাইটিস আক্রান্ত দাঁত
গ্রাফটিং করা কেশর নিয়ে হালুম হালুম করে বেড়ায়
সারা গ্রাম। সারা পাড়া।
রাতে ঘুম ঘরে কার্তিকের কুকুর হয়ে
অনার্য আগুন উত্তাপে খরায় ইন্দ্রিয়গ্রাম
মাটির শহরে এমাথা ওমাথা নিংড়ে নেয়।
সকালে ফের সেই মেটামরফসিস

খণ্ডকালীন পুরুষগুলো আলিঙ্গন থেকে
চুমুর শরীর ছাড়ায়। অস্তিত্বের খুব কাছে থেকে
তেজস্ক্রিয়ায় একেক যুগ ছটফটিয়ে
সুরতহাল প্রতিচ্ছবি, ঘাম, গন্ধ... স্মৃতি... নিয়ে
আয়নার নিজস্ব ক্ষিধে মেটায়।


এঙ্কাল্পেটরি: ১

দোচালা ছাদের ফাঁক দিয়ে মাওবাদী দগদগে ঘা
জীর্ণশীর্ণ আত্মহত্যা প্ররোচণায় অপমৃতু্যর গ্লানি পদ্মা।
ফিলিস্তিনি শিশুর পাঁজরের বনেটে মুক্তির মাইনফিল্ড
বারুদে ঠাসা বাদামের খোসা, কপালে বর্ষায় ফোটা
সাহারার বালুর স্রোতে ধোড়া সাপের ফসিল।

আঙুলের ফাঁকে রোদে শুকনো-ভিজে বিড়ি
বুক পকেটে ক্ষিধের জ্বালা। কলারে-বোতামে রঙিন বেহায়া দাগ
ভাগ্যের সোনালি ফিতেয় বাধা ভতর্ুকির রোদ
অস্থিরতম, স্থবির পিয়ন! পীরিতের চড়ুই
উঠানে মলানো ফসলের পোশাক।
সহস্র জুতোর পরিত্যক্ত সোল, বুট হয়ে কুচকাওয়াজে
হত্যাকারী হাতে ও সগৌরবে ওড়ে বোবা পতাকা।

এঙ্কাল্পেটরি: ২

জমেছিল চর্বি মাংসালু আলজিহ্বায়, ক্ষতমাখা দীর্ঘজট
চুঁয়ে, টপটপ করে শ্লেষ্মা ঝেড়ে জলপাই রঙের দুপুর বেলায়
কালো মোরগের দিব্যি লাল ঝুটি বেঁকে গিয়েছে
দমকা কালো মেঘের দঙ্গল দেখে কেউ কেউ আঁতকে উঠে
দীর্ঘক্ষণ বুটের শব্দ ভাঙা শ্লেটের চকের দাগ পড়ে যায়
কারা জানি আগাম বৃষ্টির পতন শুনেছিল।

একলা সবুজ ঘাস কিই বা করার ছিল, সে লোকগুলো
বারবণিতা চুলের ঘ্রাণ নিয়ে, তপ্তসোলে খণ্ড খণ্ড পথে
বালি শহরে অজস্র গণকবর খুঁড়ে রাখা থাকে
আরো লাশের অপেক্ষায়।

অবাধ্য সৈনিক একদিন
নিজেই নিজেকে খুন করে ফেলে।
আরো লাশের অপেক্ষায়_
কারা জানি আগাম বৃষ্টির পতন শুনেছিল।


এঙ্কাল্পেটরি: ৩
উৎসর্গ : জুলিয়ান এস্যান্জ

একদা এক সাপুড়ে বিদ্রোহী সাপের কবলে প'ড়ে
দুধ ও কলা দিয়ে সবল করে। ভাঙা বিষদাঁত
আস্তে-আস্তে আবার উঠতে থাকে মাড়িতে।
খেলা দেখাবার ফাঁকে প্রতি ক্যানভাসে গল্প
শোনায় শ্রোতাদের: কীভাবে ধরেছিল তাকে;
লোহার ছ্যাকা পড়াতে মাথা তুলে, চোখে চোখ
রেখে দাঁড়াতে পারে না। বশ-মন্ত্রে সাপুড়ের
পেট চলে যায় পেট-ভাতে। প্রায়ই কৃত্রিম
ছোবল খায় সাপুড়ে_দুটো পয়সা আর বাহবা লোভে।

একদিন দাঁত বড় হয়, হৃষ্টপুষ্ট দেহে গুমরে
থাকা সব শক্তি দানাবেধে জড়ো হয়, লোহার ছঁ্যাকা
তোয়াক্কা না করে ছোবল দেয় সাপুড়ের কপালে!
মৃতু্য পথযাত্রী সাপুড়ে আক্ষেপে বলে: কালসাপ
বেঈমান। সব অপবাদ মেনে নিয়ে সাপ
সাপুড়েরে বলে: আমার কি দোষ, আমি শুধু আমার
স্বাধীনতা রক্ষা করেছি মাত্র।
আগুনমালার পাঠ 

ফুলকি থেকে বেরিয়ে আসে এক ঝলক আগুন। শিহরণে
দলিত রোমকূপ ভীষণ; ঘাসফড়িং-লেজে ফুল ও কাঁটাদের
পথ। সম্ভাবনাময় মেয়েটি থেমে থাকে ভিজে_ আগুন দ'লে।

নগ্ন পা, উঠোনে চকচকে অন্ধকার। চড়ুই পাখি; ভেতরকার আমি
আগুন পড়তে শিখি_হরফ আকৃতি আগুন বর্ণমালায়।

তখনও আগুন জ্বালাতে শিখিনি
পারিনি ধরতে শরীরী আগুন চিতায়।


কোন মন্তব্য নেই