বাংলা সাহিত্যের প্রতিষ্ঠানবিরোধী লিটিলম্যাগাজিন ব্লগ

সাম্প্রতিক পোষ্ট

লিটিলম্যাগ : সৈয়দ তৌফিক উল্লাহ

লিটিলম্যাগ  : সৈয়দ তৌফিক উল্লাহ





সাহিত্যচর্চার সঙ্গে সঙ্গে দেশের জনজীবনকে ঘনিষ্ঠভাবে জানার সুযোগ করে দেয় লিটল ম্যাগাজিন। লিটিল মানে ছোট তাই? প্রচারে বিমূখ তাই? ‘ছোট’ শব্দার্থটি ব্যঞ্জনার শব্দ ও চেতনার বারুদে ঠাসা এক প্রতিবাদ, প্রচলিত ফরমায়েশীপণার বিরূদ্ধে: এক জোড়া মলাটের মধ্যে সব কিছুর আমদানির বিরূদ্ধে ,যশ,খ্যাতি, উর্পাজনের বহুলতম প্রচারের ব্যাপকতম বিস্তারের বিপক্ষে প্রতিবাদ।

সাহিত্য সংস্কৃতি অঙ্গনের যাবতীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা ভাঙচুর, সংস্কার, স্বরনির্মাণ, যোজন-বিয়োজন সবই ছোট কাগজকে ঘিরে চর্চিত ও আবর্তিত হয়েছে এবং হচ্ছে। আত্মপ্রকাশের তীব্র চাপ, যৌবনের উদ্ধত অহংবোধ, আত্মঘোষণা, দ্রোহ, তীব্র প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা, নিরন্তর পরীক্ষা-নিরীক্ষা, পূর্বজদের অস্বীকার করা, নতুন সাহিত্য আন্দোলন গড়ে তোলা সবকিছুই ঘটেছিল এইসব পত্রিকাকে ঘিরে। আমি মনে করি- লিটিলম্যাগ এর সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য তার সৃষ্টিশীলতায় ও নবসৃষ্টির আন্দোলনে। লিটিলম্যাগ নবচেতনা নিয়ে আত্মপ্রকাশ করে এবং লেখক ও পাঠকদের মধ্যে সেই নবচেতনাকে সঞ্চারিত করে দেওয়ার জন্য আন্দোলনে যায়। শ্রেষ্ঠ লিটিলম্যাগ গুলো নতুন সাহিত্য-আন্দোলনের মুখপত্র। সাহিত্য, দর্শন, ইতিহাস, সমাজচিন্তা, বিজ্ঞান ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রেই লিটিলম্যাগ হয়ে থাকে।”

লিটল ম্যাগাজিনের হাত ধরেই সাহিত্যে আবির্ভাব ঘটেছে আধুনিকতার। উত্তরাধুনিকতার চর্চাও চলছে লিটল ম্যাগাজিনকে ঘিরে। প্রগতিশীল চিন্তারও আবির্ভাব ঘটেছিল লিটল ম্যাগাজিনকে কেন্দ্র করে। লিটল ম্যাগাজিনই তৈরি করে দেয় সাহিত্যের গতিপ্রকৃতি। সাহিত্যে যত ধরনের আন্দোলন হয়েছে, যে-আন্দোলনকে বলা যায় সাহিত্যেরই প্রাণশক্তি, নতুন নতুন ভাবনা আর পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে সাহিত্য এভাবে যে এগিয়ে চলে, নবাায়িত হয়ে ওঠে, লিটল ম্যাগাজিনই সেই আন্দোলনে পুরোধা ভূমিকা পালন করেছে। প্রথাবিরোধী নতুন স্বরযোজনার মধ্য দিয়ে পুরনো ধারাকে ইঙ্গিতময় অবসরে ঠেলে দিয়ে অপ্রাতিষ্ঠানিক শক্তি অর্জনে পাঠকচিত্তকে নিজের দিকে আকর্ষণ করছে সর্বদা। বিগ বাজেটের পণ্যসর্বস্ব সাহিত্যের বিপরীতে নতুন পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে নব-সাহিত্য প্রেরণার নাম প্রতিষ্ঠান ও প্রথাবিরূদ্ধ  আন্দোলন  বা  ‘লিটিলম্যাগ মুভমেন্ট’ ।

লিটিলম্যাগ মুভমেন্ট স্পষ্ট উচ্চারণে জানিয়ে দেয়া, ব্যাক-ডেটেড ধারণার দিন শেষ, এবার আপ-টু-ডেট নতুনের পালা। তাই লিটল ম্যাগাজিন হলো সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্যবাহী, সাহিত্যমননে এস্টাব্লিশম্যান্ট বিরোধী সৎ ও রূচিশীল সৃজনশীল সাহিত্যপত্র। ভালো লেখা বেশি জন্মায় না, সত্যিকার নতুন লেখা আরো বিরল; আর শুধু দুর্লভের সন্ধানী হলে পৃষ্ঠা এবং পাঠক সংখ্যা স্বতঃই কমে আসে। অর্থাৎ আমরা যাকে বলি সাহিত্যপত্র, খাঁটি সাহিত্যের পত্রিকা, লিটিলম্যাগ তারই আরো ছিপছিপে এবং ব্যঞ্জনাবহ নতুন নাম।”

বাংলা সাহিত্য বললে ভুল হবে, যেকোনো সাহিত্যে লিটিলম্যাগ ভূমিকা অনস্বীকার্য। যুগে যুগে সৃষ্টিশীল সাহিত্যধারাকে প্রবহমান রেখে চলেছে এই লিটলম্যাগ। মোদ্দাকথা তারুণ্যের বহিঃপ্রকাশ ও সাহসী উচ্চারণে যা নাকি সত্য ও ন্যায়নিষ্ঠের মাধ্যমে সব অসরলতাকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে পারে, সেটাই লিটিলম্যাগ । আবার অনেকের মতে, শিল্পসাহিত্য ও জ্ঞানবিজ্ঞানের বিষয়ে চলমান ধারাকে চ্যালেঞ্জ করে ব্যতিক্রমধর্মী চিন্তাধারা ও মতামত ব্যক্ত করার মুদ্রিত বাহনকে লিটিলম্যাগ বলে। যারা সাহিত্য, দর্শন ও শিল্পচেতনায় গতানুগতিক ধারায় বিরোধী, তারা তাদের চিন্তা-চেতনায় প্রকাশ ঘটিয়ে থাকে নিজেদের সংগঠিত মুখপত্রের মাধ্যমে। কেননা সাধারণের কাছে তারা অপ্রিয়, বাণিজ্যিক কারণে বাজারের পত্রিকার পরিচালকেরা তাদের পরিহার করে চলেন। অতএব নবধারায় নবযুগের শিল্পী-সাহিত্যিকেরা তাদের মতবাদ প্রচারের জন্য ছোট কাগজের আশ্রয় নেয়। আমাদের সাহিত্যে বলা চলে লিটিলম্যাগ এর জয়জয়কার। সাহিত্য-সংস্কৃতি অঙ্গনের যাবতীয় পরীক্ষা নিরীক্ষা ভাংচুর স্বরনির্মাণ যোজন বিয়োজন সবই এই লিটলম্যাগকে ঘিরেই চর্চিত ও আবর্তিত হয়েছে এবং হচ্ছে। পাশ্চাত্যের আলোড়িত বিভিন্ন সাহিত্যতত্ত্ব দর্শনের নতুন নতুন ঢেউগুলোও এই লিটিলম্যাগ এর মাধ্যমেই আছড়ে পড়ছে আমাদের অঙ্গনটাতে।

প্রকৃত অর্থে লিটল ম্যাগাজিনের চরিত্রই হচ্ছে প্রতিবাদী ও তথাকথিত প্রতিষ্ঠান বিরোধী আচরণ। আর তাই প্রথাবিরোধী মেধাবী সৃষ্টিশীলদের সাহিত্যচর্চার শ্রেষ্ঠ মাধ্যম হচ্ছে এই লিটিলম্যাগ । এর মাধ্যমেই সাহিত্যের গতি-প্রকৃতি, তরূণ লিখিয়েদের আনকোরা উপস্থাপন ও সাহিত্যের নানামুখী পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়ে থাকে।

তাই প্রতিষ্ঠান বিরোধী আন্দোলনকারীগণ তাদের সমস্ত সাহিত্য সাধনায় সকল প্ররোচনা, লোভ-প্রলোভন ও তথাকথিত সাহিত্য স্বীকৃতিকে বাতিল করে দেয়। সৃষ্টিশীল চেতনার দৃপ্ততায় আবিষ্ট থেকে একজন নিবেদিত সংগ্রামীর ভূমিকায় অবতীর্ন হয় একটি গণমানুষের প্রকৃত চেতনাকে ধারণ করে শ্রেণীহীন এক সমাজের আকাঙ্খাকে সুবিন্যস্তভাবে তুলে ধরে একটি বৈপ্লবীক কাজকে এগিয় নেয়ার বৈপ্লবীক দায়িত্বটি পালন করেন।ফলে সাহিত্য রচনা একান্ত ব্যক্তিগত কর্ম হলেও তার প্রকাশ, আস্বাদন, অনুধাবন ও মূল্যায়ন একান্তভাবে ব্যক্তি সাহিত্যিকের ওপর নির্ভর করে না। তার সাথে অন্য সাহিত্যিক যুক্ত হন, সাহিত্যকে একটি দার্শনিক-নান্দনিক তৎপরতা হিসেবে বুঝবার জন্য, একটা সামাজিক-রাজনৈতিক কর্মকান্ড হিসেবে পড়বার জন্য, একটা যোগাযোগপ্রক্রিয়া এবং ক্ষমতাসম্পর্ক হিসেবে অনুধাবন করবার জন্য এসব যৌথ সমন্বয় প্রয়োজন হয়ে উঠে।পাশাপাশি সমাজের বৈষম্য দ্বারা সংজ্ঞায়িত করা হয় যা তা দ্বন্দ সৃষ্টি করে, এর পরিবর্তে যা আদেশ তা ঐক্যমত্য তৈরি করে। বৈষম্যের উপর ভিত্তি করে এই দ্বন্দ্বটি কেবল সমাজের বিদ্যমান সম্পর্কের মৌলিক রূপান্তর, এবং নতুন সামাজিক সম্পর্কের ফলদায়ক হয়ে উঠে প্রতিষ্ঠান বিরোধী আন্দোলন।

প্রতিটি সংগ্রামেরই একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য থাকে। তেমনি প্রকৃত সাহিত্যচর্চারও সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য রয়েছে। প্রচলিত সকল সু-শৃঙ্খল, পূজির আগ্রাসন আধিপত্যবাদীতার বিরূদ্ধ সমাজচীন্তার, স্বৈরাচারিত্ব ও নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে দাপুটে দায়বদ্ধতা নিয়ে প্রচলিত সব অন্ধকার প্রথা যা আমাদের চীন্তার শৈলীকে শৃঙ্খলিত করে তার দিকে বুক চাতিয়ে সরাসরি প্রত্যাখান বা বাতিল করে এগিয়ে এসেছে প্রথাবিরোধী লেখককূল।যাদের দৃঢ় সংকল্পের মধ্যে দিয়ে এগিয়ে চলছে ফরমায়েশী সাহিত্যে বাতিলের লড়াই।পুঁজি ও প্রথাগত মুনাফালোভী  প্রতিষ্ঠানের বিপক্ষে একদল সৃজনশীল লেখককূল বা শব্দের কামারগণ, যাদের সৃষ্টিশীল প্রবণতা, অনুভবের  ধরণ সকল সামজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় অসংগতীর বিরূদ্ধে।যাদের নেই কেন সাহিত্যিক আত্মগরিমা বা পূজিপতি হবার কোন অভীস্পা। এই একাগ্রতা ও মুনাফাহীনতার চীন্তা যে বিকল্প সৃষ্টির প্রয়াাস তা কখনোই আদর্শগত অবস্থানের বাইরে গিয়ে বা বিভ্রান্তির বিলাসিতায় ভোগবে না। এই কাজটি দায়িত্ব নিয়ে করছে প্রতিষ্ঠান বিরোধী আন্দোলন।

‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই,
তা প্রকাশ করতে যদি লজ্জাবোধ হয়, তবে সে ধরনের চিন্তা না করাই বোধ হয় ভাল।’
- প্রাচীন গ্রীক কবি ইউরিপিডিস (৪৮০-৪০৬ খ্রীঃ পূঃ)

সভ্যতার বিকশে কৃষি থেকে একটি শিল্প সমাজে স্থানান্তর এবং ঐতিহ্যগত ধর্মীয় বিশ্বাসের পতনের কারণে সামাজিক পরিবর্তনের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন, নৈতিক নান্দনিকতা গ্রহণ করেন এবং সাহিত্যকে নতুন মান এবং নতুন উত্থানকারী সমাজের উপলব্ধি প্রদান করেন।

একজন প্রতিষ্ঠান বিরোধী লেখক তার পরিবেশ-প্রতিবেশের যে লাঞ্চিত-নীপিড়ীত মানুষের যন্ত্রণাকে,শিহরণকে,আকাঙ্খাকে এবং শ্রেণীগত বৈষম্যের কারণে নানা রকমের আধিপত্যের শিকার হয়ে ও সমানুভবতা দিয়ে উপলব্ধি করে এবং সে উপলব্ধির নিরিখে মুহূর্তগুলোকে রঙ বা ভাষার বিবরণের মধ্য দিয়ে নিখাঁদ বাস্তবতার স্বরূপটাকে বিশ্লেষনী প্রকরণ বা ভঙ্গিতে রচিত করে জীবন্ত করেন।

প্রতিষ্ঠান বিরোধী লেখক তার সৃষ্টিসৃজনশীলতার চর্চা কে পুঁজির বাজার ব্যবস্থার ফরমায়েশী পরিস্থিতিতে তার শিল্পকে কোন পণ্য হিসেবে দেখতে নারাজ এবং এ পণ্যায়ন করে তোলার যে প্ররোচিত প্রক্রিয়া চারদিকে চলমান এবং বুর্জোয়া পুঁজিপতিদের যে যে আসল উদ্দেশ্য সৃজনশীল বিকাশকে মুনাফার ফাঁদে আটকিয়ে যেমন-তেমন একটা ভালো মোড়ক সম্বলিত  বাস্তবতা বিবর্জিত পণ্য গড়ে তোলা।

প্রতিষ্ঠান বিরোধীরা জীবন যাপনের প্রক্রিকায় এমন একটা নিবিড় অবস্থায়তারা নিজেদের দাড় করিয়ে রাষ্ট্র, সমাজ, প্রচলিত প্রথা, ব্যক্ত্যি মানুষের আচরন,প্রকৃতি তথা প্রভূত জীবন ঘনিষ্ট বিষয়াবলীর পাঠে নিয়োজিত করে। যে কারণে তাদের সকল অনুভূতির সঙ্গেই একটা সম্পর্ক স্থাপন হয়ে উঠে। যার ফলশ্রুতিতে সামাজিকভাবে তাদের জাগতিক রচনা হয়ে উঠছে এক শ্রেনীহীন সমাজের জীবন্ত বস্তবতার দলিল।

সাহিত্য ও শিল্পের মান ও দায়বদ্ধতার জায়গাটিকে কূরে কূরে খাচ্ছে তা হল মূল্যবোধের অবক্ষয়। বলতে দ্বিধা নেই, প্রগতিশীল, প্রথাবিরোধী, পুঁজিবাদের প্রতিকূলে, মৌলবাদের বিরুদ্ধে- এই সব শব্দ সাহিত্য ও সংস্কৃতির অঙ্গনে ব্যবসায়ের মস্ত হাতিয়ার হয়ে দাঁড়িয়েছে। একজন সাহিত্যিক হয়ে উঠছেন একটা প্রতিষ্ঠান, ফলে সাহিত্য হয়ে উঠছে একটি বিশেষ ধরনের  তৈরী করা  ফরমায়েশী পণ্য, যেখানে নান্দনিক সৌন্দর্য বলে কিছু থাকছে না। থাকছে শুধু পাতা ভরা অন্তঃসার শূন্য দায়সারা শব্দমালা।যার কোন দায়বদ্ধতা নেই।

এখন আমাদের  সাহিত্য যে স্রোতে আজ ভেসে চলেছে তার গন্তব্য ভয়াবহ শূন্যতার দিকে,  কেননা সাহিত্য এখন ব্যবসায়ীক পণ্য। চারিদিকে শুধু এখন ফরমায়েশী সাহিত্য আর তাদের প্রডাক্ট।তাই তাদের কুশল বিনিময়ে অনায়াসে বলা যাবে,  আপনার ব্যবসা কেমন চলছে? এই বইমেলায় বাজারে কি নতুন কোন মাল ছাড়ছেন! একটু খেয়াল করলে বোঝা যায় ফরমায়েশী সাহিত্যের লেখকরা মনের আনন্দে কিংবা প্রাণের উচ্ছ্বাসে খুব কমই লেখেন। বেতনভুক্ত কেরানি যেন, নিয়ম করে অফিস যাওয়ার মতন। তাই সাহিত্যের প্রতি দায়বদ্ধতা থাকে না।এমন সাহিত্যের আদৌও কোন প্রয়োজন আছে কি? তাহলে এ লেখার দরকার কি?

‘জীবিকা উর্পাজন করা যায় না এমন লেখা লেখাটা প্রতিভা।
জীবিকা উর্পাজন করা যায় না এমন লেখা লিখতে হবে।’
- শার্ল বোদলেয়র


লেখালেখি করে যদি জীবন-সংসার চালানো সম্ভব হয় তাতে কোন দোষ নেই, কিন্তু লেখালেখিটা যদি টাকা কামানোর পদ্ধতি বানায়, বিত্ত-বৈভব, খ্যাতি, পরিচীতির উৎপাত বানায় তাতে করে লিখতে পারুক আর না পারুক সকলে লেখক হতে চাইবে। সাহিত্যের কোন অর্থমূল্য হয় না- হতে পারে না। এ জন্য যদি সকলে লেখালেখি ছেড়ে দেয় দিক বা বাজারী ফরমায়েশী লেখক হয়ে আত্মতৃপ্তির ঢেকুর তুলতে চায় তুলুক। সাহিত্যে ও শিল্পে কোন কমিটমেন্ট ছাড়া করা উচিৎ না। প্রকৃত যারা সাহিত্যকে ভালোবাসে, কোন মোহ ছাড়া নিজের ভেতরের টানে সাহিত্যকে পরমাত্মীয় বানাতে লেখালেখি করবেন- তাদেরই লেখক হওয়া উচিৎ।

বাজারের দৈনিক পত্রিকা-কেন্দ্রিক যে সাহিত্যচর্চা, তাতে ফরমায়েশী লেখার যেন আড়ৎ। কোন ধরনের লেখা দরকার, কোন উপলক্ষের লেখা দরকার সব ধরনের লেখাই থাকে। পাশাপাশি সাহিত্য পুরষ্কার নামক টিনের মেডেল প্রবর্তনের জন্য জন্মনিল কর্পোরেট সাহিত্যিকদের সিন্ডিকেট। এরা তাদের প্রয়োজনমত বয়লার প্রজাতির সাহিত্যিক খামার বানিয়ে সাহিত্য নিয়ন্ত্রণ তথা কর্পোরেট নামক পূঁজি বাজারি সাহিত্যের নতুন নতুন মোটাতাজাকরন পিল আবিস্কার, প্রয়োজনে সাহিত্য কে ঘষেমেজে কারবাইড দিয়ে পাকিয়ে চকচকে করে উপস্থাপন এর হাল ফ্যাশনে মৃতপ্রায় প্রকৃত সাহিত্য।যেখানে প্রতিটি পদক্ষেপে অবিশ্বাস, মধ্যবিত্ত সংর্কীনতার ষড়যন্ত্রময় প্রতারণার খেলা চলে মানুষের স্বাভাবিক সরল সব অভিব্যক্তির প্রকাশ্য খুনের মুনাফায়!

সাহিত্যিক আধুনিকতার অগ্রদূতেরা, ঐতিহ্যগত বিবরণকে প্রত্যাখ্যান করেন, যা চেতনা প্রবাহের মত চিত্তাকর্ষক কৌশলগুলির সাথে প্রতিস্থাপন করে, যা অভ্যন্তরীণ অভিজ্ঞতার পরিবর্তে বাহ্যিক ’বাস্তবতা' নয় বরং ফোকাস করেন প্রচলিত কালানুক্রমিকতার ।

লিটিলম্যাগ সাহিত্য তাই সর্বত্রই আধুনিকতা ঘটতে পারে। সাম্প্রতিককালে, সামান্য ম্যাগাজিনগুলি আধুনিকতার আকৃতির স্থানীয় ও বস্তুগত শর্তগুলির পরীক্ষা করার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সমালোচনামূলক হাতিয়ার হিসাবে পুনরায় আবির্ভূত হয়েছে। লিটল ম্যাগাজিনের প্রবর্তন এবং সর্বাাধুনিকতার বিকাশে তাদের অবিচ্ছেদ্য ভূমিকার পুনর্বিবেচনা হিসেবে কাজ করে।
ফলে যা কিছু প্রতিষ্ঠিত তার বিরূদ্ধে তুমুল আন্দোলন গড়ে তোলে লিটলম্যাগ। এর চেতনাগত ভঙ্গিটিও থাকে সকল অংঙ্গতির প্রতি আক্রমণাত্মক, প্রচলিত রীতি যা আপামর মানুষে বিভেদ সৃষ্টি করে সেগুলো সম্পূর্ণ অস্বীকার করে কল্যাণকর এক সমতার প্রতি আহ্বান জানান দেওয়া তাদেও রচনার দ্বারাই প্রভাবিত করে সমকালীন সাহিত্য। প্রণয়ন করে নতুন সাহিত্যরীতি Ñ ভাবনা ও শৈলীতে প্রকাশ করে নাগরিক জীবনের ও মানবতাবাদী মানসিকতার প্রতিফলন। সাহিত্যের বর্তমান ও ভবিষ্যত গতিপ্রকৃতি নির্ধারণ করাই হচ্ছে লিটিলম্যাগ প্রকাশের সবচেয়ে বড়ো নান্দনিকতা।লিটিলম্যাগ মুভমেন্ট আমাদের সাহিত্যকে প্রতিদিন সমৃদ্ধ করছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।


কোন মন্তব্য নেই