পাঁচদিনে পাঁচটি কবিতা।সৈয়দ তৌফিক উল্লাহ
এই সৃষ্টির খেলায় আমি পাঁচ দিনে পাঁচটি কবিতা সমকালীন যন্ত্রণাবোধ-এ লিখলসৈয়দ তৌফিক উল্লাহ

সাজানো গোছানো কৃত্রিম শব্দবন্ধ
আমাদের আঙুলগুলো প্রজাপতির ডানা হলো'না
শুধু দেখতেই থাকলো, ফ্যাকসে ঠোটগুলো মৃত্যুর নামতা
আওড়াতে থাকে ফ্যালফ্যালে চোখের ভাষায়
পাঁজরের হাড়ের বোবাব্যাথা, ভূমি ও ভাতের চাহিদা
কেউ কি পেরেছে পাড়ি দিতে!
কবুতরের কেটে দেওয়া ডানার মতো ব্যাথায় কাতর স্বরে,
যীশুখ্রীষ্টের পুনরুন্থান এর মতো বিশ্বাসী আত্মায়
গোপন গ্রেনেড আর বারুদে পোড়া সব দুপুর,
সব ভোর, জীবন মানেই ষড়যন্ত্রের মৃত্যুকূপ।
সময়ের ঔদ্ধত্য হয়ে গেছে আভিজাত্য
হয়ে উঠেছে ক্ষমতা শ্রেণী বৈষম্যের মানদন্ড।।
শুধু কেউ বোঝেনি নাড়ীকাটা প্রসূতি মায়ের ব্যাথা।।
যে প্রাচুর্য নিয়ে মানুষের অহংকার ছিল
সেটা গর্ভেই বিনাশ হয়েছে, বিপ্লব এখন মানুষের নাম,
আন্দোলন বা প্রতিবাদ নয়।।
আপনার শুরুতে আবার শুরু করুন
মানুষেরা খুব উজ্জ্বল আলোতে চোখ খুলে দেখে
অপরিহার্য বনসাই হবার বিদ্যা শিখে ফেলেছে।
চারপাশে রঙিন প্রেমের বান্ডিল জীবনের মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময়
আমরা যে অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছি প্রতিদিনের লড়াই এবং বিজয়গুলি
বিশ্বের সমস্ত প্রাণই অনুভব করছে অথচ পৃথিবীর
সময় থমকে আছে আমদের অপরাধে।
সভ্যমানুষ প্রকৃতির কাছে মুখ দেখাবার যোগ্যতা হারিয়ে আজ
মুখোশ আবৃত হয়ে গেছে, তবুও লাজ-লজ্জাহীন মানুষেরদল
কতদিনইবা লুকিয়ে রাখবে নিজেদের গৃহের গুহায়?
সামাজিকতার মানে পাল্টে নিমিষেই হয়ে গেল দূরত্ব নির্বাণের পথ
পুরাতন জীবনকে এত ভালবেসে একসাথে কাটিয়েছি তা হ'ল ছোঁয়াচে,
অপরিবর্তিত আমরা একে অপরের কাছে ছিলাম যাই,
এখনও আমরা আছি তাই জীবন এর অর্থ যা বোঝায়
তার সবকিছু যেমন ছিল ঠিক তেমনি রয়েছে
শুধু নিরঙ্কুশ মৃত্যুর ধারাবাহিকতা ছাড়া সবই অটুট আছে।
কিছুই হারিয়ে যায়না অলস দু‘চোখে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে ক্লান্তিরভারে স্বপ্নহীন
বিষন্নতার ঘেরাটোপের নিসঙ্গতা আক্সিজেনের মতো আজ প্রয়োজনীয়।
আর্য-অনার্য বিন্যাসের নবযাত্রায় হয়তো সৃষ্টি হবে বৃক্ষের মত প্রবীণ ভাষ্কর্য
অতঃপর একদিন সমস্ত কিছু আগের মতই হবে,কিছুই হারিয়ে যায়না ।
ক্ষমাহীন অ-গণিত মিনিট পূরণ করতে পারেন যদি
অ-গণিত ষাট সেকেন্ড মূল্যের দূরত্ব পাড়ি দিয়ে
অন্তরালের অপেক্ষা শেষ হবেই একদিন!
সুদিনের খুব কাছাকাছি সময়ে পৃথিবী এবং এর মধ্যে যা কিছু
সব কিছুই প্রত্যাবর্তনের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় পথ চেয়ে রয়!
28/06/20
আমি দৃষ্টির বাইরে থাকায় কেন আমি মনের বাইরে থাকবো?
প্রত্যেকে বলে জীবন সহজ,
তবে সত্যিকার অর্থে এটি বেঁচে নেই।
সময় কঠিন হয়ে যায়,
যদিও আমি কাঁদতে চাই
আমি বাঁচতে লড়াই করতে যাচ্ছি,
যদিও আমি মরতে চাইছি।
আমি গর্জনের মাঝে দাঁড়িয়ে আছি
একটি উত্তেজনাকর তীরে
এবং আমি আমার হাত ধরে।
দুঃখের সাথে আমরা নিজের মন হারিয়ে ফেলেছি,
ভয় নেই, সব পুনরুদ্ধারে; আমার সব কিছু পিছনে ছেড়েছি।
ঠিক চাঁদের মতো, সূর্যের মতো,
জোয়ারের নিশ্চয়তার সাথে,
আশা যেমন উচু হয়,
একটি রাতে বা একটি দিনে।
যা আমরা দেখি বা দেখিনা‘তা
একটি স্বপ্নের মধ্যে একটি স্বপ্ন কিন্তু।
আমি একটি কালো সমুদ্র, লাফিয়ে ও প্রশস্ত,
সামুদ্রিক জোয়ার সহ্য করে পড়ি দিচ্ছি।
সন্ত্রাস ও ভয়ের রাত্রি রেখে যাওয়া স্বপ্নের ঘুম ভেংঙে
আমি আচমকা জেগে উঠি
যা আমরা পছন্দ সমগ্র মহাবিশ্ব জুড়ে ফিরিয়ে আনব বলে
এখন থেকে সব কিছু পাল্টে ফেলেছি
ছিড়ে দিয়েছি সব সর্বনাশা বির্নিমাণ ।
হয়ত সকলেই একদিন চারদিকে জড়ো হবে
আগুনের দিব্বী দ্রোহের লাভার স্রোতে ভেসে
আমার প্রত্যাবর্তনের হবে অধীর আগ্রহে উত্তেজিত
দৃষ্টির বাইরে হতে ফিরবো মনের গহীনে।
29/06/20
লাশকাটা ঘরে ব্যাবচ্ছেদের আগে
লাশকাটা ঘরে ধোয়া ওড়া বরফের চাই গলে
তৈরি হচ্ছে নকল স্রোতের টান,
অতল গহ্বরে তলিয়ে গেছ সব দাহ্যকাল,
শুধু সময় নামক ঘূনপোকা, মাছিদের ওড়াউড়ি,
কর্পুর আর চায়ের পাতির সাথে বরফগলা জলে ভিজে যায়
হুগলার মাদুরে মোড়ানো নিথর শরীর।
লোকজনের হাকডাক, বিদেয় করলেই যেন ওরা বাচে!
পড়শিদের নকল কান্না, ডোমদের হাতের ছেনী-বাটালীর
টুকটাক ছন্দে গুনগুন মাতাল গান
মৃতরা সবই টের পায় করার থাকে না কিছু।
শুধু ছড়িয়ে থাকা পা'দুটো গীটবাধা থাকে
জন্মান্তরের নাড়িকাটা ব্যথার খাতাবন্ধ হলো
চমৎকার এইতো জীবন, কড়া বেন্জীনের গন্ধে,
উলঙ্গ শরীরে নিথর দেহ নিয়ে আপেক্ষায় পড়ে থাকা,
মর্গের দরজা দিয়ে ডাক্তার আসলেই শরীরের ব্যাবচ্ছেদ হবে।
মর্গের বাইরে মানুষের কোলাহলে হঠাৎ
বন্ধ্যা কোন নদী ও নারীর মত লাশকাটা ঘরে শুয়ে
অতীত থেকে যে মূলত বেদনার মধ্যে থেকেও
এই আঁধারেও নিথর শরীরে খোলা আকাশ দেখতে ইচ্ছে করে।
জীবন জুড়ে শুধু পলকই ফেললাম, দেখা হলোনা কিছুই।
প্রস্থানে সব আলো আঁধার ফিকে হয়ে যায়।
জীবন একটা আস্ত শকুন, ওর ওড়া চাই।
তাই তাড়াহুড়ো আর অস্হিরতার নিস্তার নাই।
30/06/20
বিবাদের ষাঁড়
আমি কেউ না!
আসলে,আপনিও কেউ না?
তাহলে আমাদের মধ্যে একটি জুড়ি আছে - বলুন না!
আমার ঘৃণা করার সময় ছিল না, কারণ
কবর আমাকে বাধা দিত,
আর জীবন এতটা পর্যাপ্ত ছিল না যে
শত্রুতা শেষ করতে পারত।
কিংবা ভালোবাসার সময়ও আমার ছিল না,
তবে থেকে কিছু শিল্প হতে হবে,
ভালবাসার ছোট পরিশ্রম, আমি ভেবেছিলাম,
আমার জন্য যথেষ্ট বড় ছিল।
আমি একটি কালো সমুদ্র লাফিয়ে প্রশস্ত হতে শিখেছি
প্রতিহত করতে সাইকোপ্যাথিক চিন্তাভাবনা।
ইতিহাসের লজ্জার ঝুঁকির বাইরে গিয়ে দেখুন
শ্রদ্ধার সাথে যুক্তির মূল বিষয়গুলি ভাবুন
ধারণার একটি সত্তা বিবাদ থেকে বুড়ো ষাঁড়ের
ধারাবাহিকতার যে পরিবর্তন, তার অভিযোজন করুন
নিজেই টেরপাবেন অস্তিত্ব সংকটের মধ্যে রয়েছেন,
আত্মবিলাপের ঘোর কেটে গেলে সেরে উঠবেন।
01/07/20
কোন মন্তব্য নেই
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন