বাংলা সাহিত্যের প্রতিষ্ঠানবিরোধী লিটিলম্যাগাজিন ব্লগ

সাম্প্রতিক পোষ্ট

"নিজের বেলায় আঁটিসুঁটি পরের বেলায় চিমটি কাটিতে নিজেদেরকে অভ্যস্ত করে তুলি।"



দুই
"নিজের বেলায় আঁটিসুঁটি পরের বেলায় চিমটি কাটিতে নিজেদেরকে অভ্যস্ত করে তুলি।"
যে কোনো শাসক দল,সে তারা দক্ষিণপন্থী বা বামপন্থী,নরম দক্ষিণ বা চরম দক্ষিণ,নরম বাম বা চরম বাম,আগাপাশতলা সুবিধেবাদী পুচ্ছে বামপন্থী পালক লাগানো,যাই হন না কেন,একটা জায়গায় প্রত্যেকেই এক আর সেটা হল কেউই ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যকে পরিসর দিতে চান না। পুঁজিবাদী বা সমাজতন্ত্রী, সামরিক, একনায়কতন্ত্রী,গণতান্ত্রিক বা স্বৈরাচারী,সভ্য দুনিয়ায় আমরা এ পর্যন্ত যত ধরনের শাসনব্যবস্থা দেখেছি আমাদের অভিজ্ঞতার মধ্যে পড়ে,কেউ শুরু থেকেই কেউবা একটা পর্যায়ের পরে,শেষপর্যন্ত প্রত্যেকেই ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের বিরোধী। চূড়ান্ত বিরোধী। আর একটা আধা সামন্ততান্ত্রিক-আধা পুঁজিবাদী সমাজে তো ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের সামান্য চর্চাটুকুও থাকে না। আমাদের পরিবারগুলিতে এর চর্চা প্রায় দুর্লভ। আর আমাদের ভবিষ্যচিন্তাবৃত্তে পরিবারের প্রভাব তো থেকেই যায়। আমরা ব্যক্তিস্বাতন্ত্র‍্যকে থেঁতলে যেতে, চটকে যেতে,দেখতে দেখতে বড় হয়ে উঠি। সামূহিকের পিণ্ডের ভেতর সেঁধিয়ে নিজেদের নিরাপত্তা খুঁজতে থাকি।
একদা কবিদের নগরের বাইরে ছুড়ে ফেলার প্রস্তাব করার কারণে প্লেটোর মর্যাদা কিছুটা ক্ষুণ্ন হয়েছিল। পরবর্তীকালের যুগোস্লাভিয়ার অভিজ্ঞতা থেকে বিচার করলে, এটি বরং একটি সুবিবেচনাপূর্ণ উপদেশ, যেখানে জাতিগত শুদ্ধি-অভিযানের নীল-নকশা তৈরি হয়েছিল কবিদের বিপজ্জনক স্বপ্নগুলো নিয়ে। এটা সত্য যে, স্লোবাদান মিলোশেভিচ জাতীয়তাবাদী হুজুগকে নিজ উদ্দেশ্যে ব্যবহার করেছিলেন। কিন্তু এটা ছিল সেই কবিদের ভূমিকা, যারা তাঁকে এই মালমশলা যুগিয়েছিলেন, যে চিন্তা নিজেই নিজেকে ধার দিয়েছিল ব্যবহৃত হতে। তাঁরা—সেইসব সচেতন কবি, দূষিত রাজনীতিবিদেরা নন কিন্তু—যাঁরা ছিলেন এই সবকিছুর মূলে, সত্তরের দশক এবং আশির দশকের প্রথমদিকে যখন আগ্রাসী জাতীয়তাবাদের বীজ বপন করতে শুরু করেছিলেন শুধু সার্ভিয়াতেই নয়, বরং একইসাথে সাবেক যুগোস্লাভিয়ার প্রজাতন্ত্রগুলোতেও। শিল্প-সামরিক ব্যবস্থার পরিবর্তে, পরবর্তী সময়ের যুগোস্লাভিয়ায় কাব্যিক-সামরিক ব্যবস্থার মধ্যে আমরা কাল কাটাচ্ছিলাম, যে বৈশিষ্ট্যগুলো মূর্তরূপ পেয়েছিল দুইজন সমচরিত্রের ব্যক্তি রাদোভান কারাদজিচ এবং রাতকো ম্লাদিচের মধ্যে। কারাদজিচ শুধুমাত্র একজন নিষ্ঠুর রাজনৈতিক এবং সামরিক নেতাই ছিলেন না, বরং একজন কবিও ছিলেন। তাঁর কবিতাকে উদ্ভট বলে বাতিল করে দেয়া যাবে না। কবিতাগুলো অনেকখানি ঘনিষ্ঠ পাঠ দাবি করে, অতঃপর এটি সেই বার্তার সন্ধান দেয়, কিভাবে ক্ষুদ্র জাতিসত্তার নির্মূল-প্রক্রিয়া কাজ করে। এখানে তাঁর একটি শিরোনামহীন কবিতার কয়েকটি পঙ্‌ক্তি দেয়া হলো,
যে পঙ্‌ক্তিগুলো ‘ইজলেট সারাজেলিকের জন্য’ বলে উৎসর্গ করা হয়েছে :
ধর্মান্তরিত হও আমার নবীন বিশ্বাসের ভিড়ে
আমি তোমায় নিবেদন করছি এমন কিছু
যা কেউ করে নি এর আগে
আমি নিবেদন করছি ঝড়ো হাওয়া এবং দ্রাক্ষারস
একজন যার অন্ন নেই, আমার সূর্যকিরণ
তার আহার যোগাবে
হে জনগণ আমার বিশ্বাসে কিছুই নিষিদ্ধ নয়
সেখানে আছে কেবল ভালোবাসা এবং মদ্যপান
এবং সূর্যের দিকে তাকিয়ে থাকো
যতক্ষণের জন্য তুমি চাও
এবং স্বর্গীয় প্রকৃতি তোমাকে কিছুই
নিষেধ করবে না
ওহ সমীহ করো আমার আহ্বানকে ভ্রাতৃগণ
ভিড়ের মানুষেরা।
মিলোশেভিচই প্রথম ব্যক্তি, যিনি আমাদের সেই পর্বতশৃঙ্গ থেকে নিচে তাকাতে বাধ্য করেছিলেন।
নৈতিক বিধিনিষেধে বন্দি সুপারইগো (পরা-অহম) আজকের ‘উত্তরাধুনিক’ জাতীয়তাবাদের সঙ্কটপূর্ণ একটি বৈশিষ্ট্য। এখানে, প্রচলিত মতানুসারে, ধর্মনিরপেক্ষ সমাজের নানা দোলাচলের সুযোগ নিয়ে আবেগী জাতিগত পরিচয় দৃঢ়ভাবে কিছু মূল্যবোধ এবং বিশ্বাসের পুনর্জাগরণ ঘটিয়ে চায় সমাজটাকে ঘুরে দাঁড় করাতে : জাতীয়তাবাদী ‘মৌলবাদ’ আকারে তা গোপনে গোপনে কাজ করে, এমনকি আপনার ভিতরেও। আজকের এই জাতীয়তাবাদের বিকৃত, কপট-উদার ভাবটিকে পুরোপুরি চিনতে না পারলে, এবং বুঝতে না পারলে কিভাবে সামাজিক রীতিনীতির ক্ষেত্রে কর্তৃত্ববাদী সুপারইগো সম্পূরক ভূমিকা রাখে, এর প্রকৃত গতিবিধি আমরা ধরতে পারব না।
হেগেল তাঁর Phenomenology of Spirit গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন নিঃশব্দ, বিরামহীন ‘আত্মার বয়ন’-এর কথা : যা তলে তলে বদলে দেয় মতাদর্শিক সহযোগীদের, বেশিরভাগ সময়েই তা থাকে জনগণের চোখের আড়ালে, তারপর হঠাৎ বিস্ফোরিত হয়, বিস্ময়ে বিহ্বল হয়ে পড়ে সবাই। এটাই ঘটে চলেছিল প্রাক্তন যুগোস্লাভিয়ায় সত্তর ও আশির দশকজুড়ে। আশির দশকের শেষপ্রান্তে যখন এসব বিষয় হঠাৎ প্রকাশিত হলো, তখন অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে, ততদিনে পুরাতন মতাদর্শিক ঐক্যের বিষয়টি সম্পূর্ণরূপে নষ্ট হয়ে নিজের মধ্যেই এটি ভেঙে পড়েছিল। সত্তর এবং আশির দশকে যুগোস্লাভিয়া ছিল কার্টুনছবির সেই বিখ্যাত বেড়ালের মতো—যে পর্বতশৃঙ্গের দিকে ক্রমাগত তার যাত্রা অব্যাহত রাখে, শুধুমাত্র তখনই তার পতন ঘটে, একদম শেষমুহূর্তে, যখন সে নিচে তাকায় এবং দেখে যে তার পায়ের তলে কোনো জমি নেই। মিলোশেভিচই প্রথম ব্যক্তি, যিনি আমাদের সেই পর্বতশৃঙ্গ থেকে নিচে তাকাতে বাধ্য করেছিলেন।
অস্ট্রিয়ান পিটার হান্দকের ব্যাপারে কী বলা যায়, যিনি প্রায় আজান দিয়ে স্লোবাদান মিলোশেভিচের শেষকৃত্যে যোগ দিয়েছিলেন? কারাদজিচ ও তার বন্ধুদের ফালতু কবি হিশেবে খারিজ করা খুবই সহজ; যদিও সে সময় অন্যান্য যুগোস্লাভ জাতির (সার্ভিয়াসহ) ‘মহান’ এবং ‘মৌলিক’ বলে স্বীকৃত কবি-সাহিত্যিকেরাও ছিলেন পুরোপুরিভাবে জাতীয়তাবাদী প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত। সমসাময়িক ইউরোপিয়ান সাহিত্যের একজন ক্লাসিক, অস্ট্রিয়ান পিটার হান্দকের ব্যাপারে কী বলা যায়, যিনি প্রায় আজান দিয়ে স্লোবাদান মিলোশেভিচের শেষকৃত্যে যোগ দিয়েছিলেন? প্রায় এক শতাব্দী আগে, জার্মানিতে নাজিদের উত্থানকে ইঙ্গিত করে, কার্ল ক্রাউস রসিকতা করে বলেছিলেন, কবি ও চিন্তকদের (Ditchter und denker) দেশ জার্মানি হয়ে উঠেছে বিচারক ও কসাইদের (Richter und henker) দেশ। হয়তো এরকম ওলট-পালট আমাদের আর বেশি হতবাক করে না। আর এই কাব্যিক-সামরিক জটিলতা যে কেবল বলকান বৈশিষ্ট্য নয়, সে বিভ্রান্তি দূর করতে অন্তত হাসান গেজের নামটি উল্লেখ করা যায়, যাকে বলা হয় রুয়ান্ডার কারাদজিচ, তার পত্রিকা ‘কাঙ্গুরা’তে পরিকল্পিতভাবে তুতসি-বিরোধী ঘৃণা ছড়িয়েছিলেন তিনি এবং উশকে দিয়েছিলেন গণহত্যার অভিযানকে। কিন্তু কবিতা ও সহিংসতার এই যোগাযোগ কি নেহাত একটি দুর্ঘটনা? ভাষা এবং সহিংসতা কিভাবে পরস্পর যুক্ত? ওয়াল্টার বেঞ্জামিন তাঁর Critique of Violence গ্রন্থে একটি প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন : ‘সংঘাতের কোনো অহিংস সমাধান কি সম্ভব?’ তাঁর উত্তর হলো, ‘ব্যক্তিগত সম্পর্ক’, সৌজন্য, সহানুভূতি ও বিশ্বাসের মাধ্যমে তা সম্ভব। মানুষের বোঝাপড়ার একটি ক্ষেত্র আছে যেখানে সহিংসতার দ্বারা প্রবেশ অসম্ভব, সমঝোতার ভাষা দিয়েই কেবল পৌঁছুনো যায়। এই গবেষণা (বেঞ্জামিনের) ভাষা এবং প্রতীক-বিন্যাস সম্পর্কিত মূলধারার প্রভাবশালী ধারণার সাথে যুক্ত—যার মধ্যে নিহিত পারস্পরিক সম্পর্কোন্নয়ন, মধ্যস্থতা ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান—যা তাৎক্ষণিকভাবে সহিংস, আনাড়ি কোনো মোকাবেলার পথ এড়িয়ে যেতে সাহায্য করে। একে অন্যের ওপর চড়াও না হয়ে যখন আমরা ভাষার মাধ্যমে তর্ক-বিতর্ক বা কথা চালাচালি করি, সেটা কখনো আক্রমণাত্মক হলেও, তাতে কিছুটা অন্তত মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকে। এখন তো ভিন্নমত পোষন করলেই তার জেল, জরিমানা বা পরাপারের টিকিট নিশ্চিত।
ইউরোপীয়দের আগমনের আগেই আধুনিকতা যেন পৌঁছে গেছে তৎকালীন ভারতবর্ষের মাটিতে। আর তাকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন সম্রাট আকবরের নাতি দারা শিকোহ। কিন্তু পরিণাম তার ভালো হয়নি। নিজের অধিকার দিল্লির মসনদ থেকে কেবল বঞ্চিতই করা হলো না, নিশ্চিৎ করা হলো মৃত্যু। শত্রুর শেষ রাখতে নেই। তাই হয়তো পরিণাম ভালো হলো না দারা শিকোহর অন্যতম প্রিয় ব্যক্তি সারমাদের জন্যও। আওরঙ্গজেব তাকে শিরোচ্ছেদে মৃত্যুদণ্ড দেন। অথচ যে সকল অপরাধের জন্য তাকে দণ্ড ভোগ করতে হলো; তা থেকে তিনি মুক্ত। ক্ষমতার কাণ্ড দেখে কেবল হেসেছেন তিনি। আর কথাগুলো হয়ে উঠেছিল কবিতার মত- ‘যুম বা দরে মারেফাত গাদায়ে না কুনান’, বা পরম সত্যের দরজা ভিন্ন আমি কারো কাছে ভিক্ষা চাই না।" আমদের বর্তমান বাংলাদেশ সহ বিশ্বের প্রায় সকল দেশের মানবজাতি শেষের দিকেই ছুটছে।
"ইতিহাস মানবজাতির কর্ম ছাড়া আর কিছুই নয় .. তাদের শেষের দিকে ধাওয়া ..." - কার্ল মার্কস
তাই যেকোনও দীর্ঘস্থায়ী লড়াইয়ের দুটো রাস্তা থাকে। একটা ট্যকটিকাল লাইন। অপরটি স্ট্র্যাটেজিক লাইন। এই মুহূর্তে ট্যাকটিকাল লাইন হিসেবে বাঙালি জাতীয়তাবাদী আবেগকে জাগিয়ে তোলা ও এদেশীয় ফ্যাসিবাদী সাম্রাজ্যবাদের বরপুত্র নগ্নপুঁজিবাদের বিরোধিতা করা জায়েজ হয়ে পড়েছে। কারণ এই সময়ের বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরত, আইন শৃঙ্খলার চরম অবনতি, ঘুষ, দুর্নীতি, মাদক, চোরাচালান,খুন, ধর্ষণ, বিলম্ব বিচার, সরকারের জবাবদিহিতার দায়বদ্ধহীন স্বেচ্ছাচারী আচরণ, অর্থ পাচার, অপ-সংস্কৃতির আগ্রাসন, সরকারি দলের অঙ্গ সংগঠন এর লাগামহীন দমন- নীপিড়ন, সহ সমাজের সকল ক্ষেত্র ন্যারেটিভ মোটো দিয়েই উগ্র দক্ষিণপন্থী- বামপন্থীর মিশ্রনে নব্য সংস্করণের ফ্যাসিবাদ আজ বাংলাদেশে বহিরাগত আগ্রাসন কায়েম করতে চাইছে। ইচ্ছে মত প্রতিবেশী বন্ধুবেশী দেশ সেটা প্রয়োগে বাধ্য করছে। চাটুকারের মত ক্ষমতার লোভে হ্যা হুজুর,জ্বী হুজুর করে মেনে নিচ্ছি। বর্ডারে খুনের মিছিল থামছে না, তবু রাষ্ট্রীয় কোন প্রতিবাদ নেই, নেই কোন প্রতিরোধের দৃশ্যমান পরিকল্পনা। আমরা কি তাদের অঙ্গরাজ্য নাকি তাদের ফরমায়েশ বাস্তবায়নে অঙ্গীকারবদ্ধ।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু এর জন্যই স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনে ছিলেন। তিনি বেঁচে থাকলে তিনিই সবার আগে ঢাল হয়ে জাতি কে এই তাবেদারী থেকে বাঁচাতেন। কথায় কথায় বলি এটা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল, তাহল এগুলোও কি,"রাজনৈতিক অস্থিরত, আইন শৃঙ্খলার চরম অবনতি, ঘুষ, দুর্নীতি, খুন, ধর্ষণ, বিলম্ব বিচার, সরকারের জবাবদিহিতার দায়বদ্ধহীন স্বেচ্ছাচারী আচরণ, অর্থ পাচার, অপ-সংস্কৃতির আগ্রাসন, সরকারি দলের অঙ্গ সংগঠন এর লাগামহীন দমন- নীপিড়ন, বাকস্বাধীনতা রোধ, অনিরাপদ সড়ক, প্রভৃতি অনাচার সমূহ"। নিশ্চয় নয়, এগুলো ঘটবে তিনি কল্পনাও করেনি। পুরোজাতি আজ ভয়ংকরতম বিভীষিকাময় দিনযাপন করছে। ক্ষমতাধররা ক্ষমতা আঁকড়ে ধরতে বাংলাদেশটাকে পুলিশী রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। তাই কোনও কোনও মুহূর্তে একটু চড়া দাগের শোনালেও বাঙালির সংস্কৃতি, বাঙালির ঐতিহ্য ও তার গর্ব নিয়ে জোরগলায় কথা বলা এই মুহূর্তে প্রয়োজন। চাটুকারেরা অতীতে ক্ষমতাধরদের পা চেটেছে এখনও চাটছে। এদের থেকে পরিত্রনের কোন পথ কি নেই? এ এদেশের উন্নয়নের জোঁয়ার ঠিকই হচ্ছে, ধনীরা আরো ধনী, গরীবরা দারিদ্র্য সীমার তলানীতে আর মধ্যবিত্তরা শ্রেণী বৈষম্যের এই যাতাকলে পীষ্ঠ হয়ে খাবি খাচ্ছে। এই কি আমাদের স্বপ্নের স্বদেশ। আমরা স্বাধীনতা যুদ্ধজয় করলেও স্বাধীনতা রক্ষার যুদ্ধে এখন জিততে পারিনি। জিডিপি, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়ছে ঠিকই, বাড়ছে না জীবনযাত্রার মান, নৈতিক মূল্যবোধ, পারস্পরিক সহমর্মিতা, স্বচ্ছতা, সততা, সুনাগরিক এর সংখ্যা। প্রতিনিয়ত নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, শিক্ষা বাণিজ্য, স্বাস্থ্য বাণিজ্য তথা একজন নাগরিক এর মৌলিক আধিকার নিয়ে বাণিজ্যের বেনিয়াবৃত্তি, গণতন্ত্রের নামে ভোট ডাকাতি, সমগ্র রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলার চরমতম অবনতি এক কথায় রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস। দেশে আইনের শাসন থাকলে প্রকৃত গণতন্ত্র উচ্ছুনে যেত না। যে দেশে শিক্ষালয়ে ছাত্ররা শিক্ষক পেটায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্যরা তাদের কার্যকলাপের জন্য প্রশ্নবিদ্ধ হবার পরে স্বপদে বহাল থাকে, তাদের কাছ থেকে আমাদের পরিত্রাণ ছাড়া শিক্ষা আর্জনের আশা রাখাটা চরম বোকামী। অথচ রাষ্ট্র নিরব। আমাদের সংবিধানে আছে প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগন। আদৌ কি তার প্রতিফলন ঘটছে? আমাদের সংসদে আইনপ্রনেতাগণ এর মধ্য ৭% সদস্য আইন জানেন কিনা আমার সন্দেহ? অধিকাংশই ব্যবসায়ী, মহান সংসদের এই পদটাকে তাদের পুজিঁর বিকাশকেন্দ্র বানিয়ে নানান ফন্দিফিকির করে লুটপাট করছে সাধারন নাগরিকের সর্বস্ব। এভাবে চলতে দেওয়া যেতে পারেনা।
১৯৪৭-১৯৭১ ১৯৪৭ সালের পূর্বে দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার ফলে খুব সাধারণ ও পৌনঃপুনিক আইনগত নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়। ভারত বিভাগের পর তা ক্রমশ কমতে থাকে। পরবর্তীকালে ১৯৫০ সালে ঢাকা, বরিশাল, সিলেট ও বগুড়াতে পুনরায় দাঙ্গা দেখা দেয়। ১৯৫০ সালে পূর্ব পাকিস্তান পুলিশ প্রশাসনের বার্ষিক প্রতিবেদনে দেখা যায় যে, এ সময় বেআইনি সমাবেশসহ বাংলাদেশে মোট ৩,৩৮৩ টি দাঙ্গা হয়। ১৯৪৭ সালে উপমহাদেশের বিভক্তি পুলিশকে এক নতুন অপরাধ পরিস্থিতির সম্মুখীন করে। সেটি হলো সীমান্ত অপরাধ। সে সময় সীমান্ত চিহিূত না থাকায় সীমান্তে প্রায়ই গোলযোগ দেখা দেয়। চোরাকারবারী ও বেআইনি মালামাল পাচার ব্যাপক আকার ধারণ করে। তদুপরি রাজনীতির সাথে সামাজিক-অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে অন্যান্য অপরাধ যেমন- শ্রমিক অসোন্তষ, শিল্প ধর্মঘট, জমিদারি ব্যবস্থা উচ্ছেদ আন্দোলন ইত্যাদি। সে সময় পুলিশের বার্ষিক প্রতিবেদনে অপরাধের কয়েকটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়। যথা: প্রথম শ্রেণি: রাষ্ট্র, শান্তি, নিরাপত্তা এবং ন্যায় বিচারের পরিপন্থী মারাত্বক অপরাধ; দ্বিতীয় শ্রেণি: ব্যক্তির বিরুদ্ধে মারাত্বক অপরাধ; তৃতীয় শ্রেণি: ব্যক্তি এবং সম্পত্তি অথবা সম্পত্তির বিরুদ্ধে মারাত্বক অপরাধ; চতুর্থ শ্রেণি: ব্যক্তির বিরুদ্ধে ছোটখাটো অপরাধ; পঞ্চম শ্রেণি: সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতিমূলক ছোটখাটো অপরাধ; ষষ্ঠ শ্রেণি: বিশেষ এবং স্থানীয় আইনের বিরুদ্ধে অপরাধ। ১৯৪৮ ও ১৯৫০ সালে দেশে রাহাজানি ও ডাকাতির সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। ১৯৫৬-৫৭ সালে দেশে খুন, ডাকাতি, দলবদ্ধ ডাকাতি, চুরি প্রভৃতি ধরনের অপরাধ বৃদ্ধি পায় এবং এর কারণ হিসেবে সমকালীন রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকটের পাশাপাশি আইনি দুর্বলতাকে চিহিূত করা হয়। অপরাধ প্রবণতা ১৯৭১ থেকে স্বাধীনতা পরবর্তী বছরগুলোতে দেশে চুরি, ডাকাতি, খুন, লুণ্ঠন, চোরাকারবারী, চর দখল ও ভূমি সংক্রান্ত নানা অপরাধ বৃদ্ধি পায়। মূলত যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে দুর্বল অর্থনৈতিক অবস্থা ও নানা প্রশাসনিক অব্যবস্থাপনা এর জন্য দায়ী। পরবর্তীকালে দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তন, দীর্ঘ সামরিক শাসন ও দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে নিষিদ্ধ ঘোষিত চরমপন্থী দলের আবির্ভাব ও আন্তঃকোন্দল বৃদ্ধির কারণে দেশে অপরাধ প্রবণতা বেড়ে যায়। ১৯৯০’র দশক পরবর্তী সময়ে আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির আবির্ভাব, ডিজিটাল সংস্কৃতির বিকাশ, জনসংখ্যা ও বেকারত্ব বৃদ্ধি দেশের অপরাধ জগতে আমূল পরিবর্তন এনেছে। অপরাধের ধরন পরিবর্তনের পাশাপাশি এর সংখ্যাও দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশের অপরাধ সংক্রান্ত পুলিশ প্রতিবেদন ও অন্যান্য গবেষণাগুলো পর্যলোচনা করলে দেখা যায় যে, সময় ও স্থানভেদে দেশে অপরাধ আচরণে তারতম্য লক্ষ্য করা যায়। যেমন- দেশের সমুদ্র উপকূলীয় জেলাগুলোতে (ঝালকাঠি, বরিশাল, চট্টগ্রাম, ফেনী ও কক্সবাজার) এবং জনবহুল ও দারিদ্র্যপীড়িত এলাকা যেমন- ঢাকা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ প্রভৃতি হাওরসমৃদ্ধ জেলায় অপরাধমূলক কর্মকান্ড বেশি লক্ষ্য করা যায়। বর্তমানে বাংলাদেশের অপরাধ পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করলে দেখা যায় এখানে মাদকদ্রব্য পাচার, মানি লন্ডারিং, চাঁদাবাজি, ভাড়াটে খুনি দ্বারা সংঘঠিত খুন প্রভৃতির মত অপরাধ যেমন সংঘটিত হচ্ছে তেমনি মানুষ পাচার, ডাকাতি, দুর্নীতি, কালোবাজারি, রাজনৈতিক সহিংসতা, সন্ত্রাসবাদ, অপহরণ প্রভৃতি অপরাধও ঘটছে।
বিদেশি মাদক পাচারের একটি ট্রানজিট দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে পুলিশের রিপোর্ট আছে। আন্তর্জাতিক মাদক নিয়ন্ত্রণ বোর্ড কর্তৃক ২০০৭ সালে প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদন অনুসারে বাংলাদেশ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া হতে ইউরোপে হেরোইন পাচারের মূল ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহূত হচ্ছে। রিপোর্টে উল্লেখ করা হয় যে, বাংলাদেশ ও ভারতের দীর্ঘ সীমান্ত মাদকের আন্তঃসীমান্ত চোরাচালানের ক্ষেত্রে অবদান রাখছে। বাংলাদেশে হেরোইন পাচারের বড় তিনটি পথ রয়েছে যার উৎস প্রতিবেশী রাষ্ট্র পাকিস্তান, ভারত ও মিয়ানমার। অনুমান করা হয় যে, বাংলাদেশে কমপক্ষে ১,০০,০০০ লোক মাদক চোরাচালানের সাথে জড়িত। তাছাড়া কম্পিউটার সফট্ওয়ার নকল করার অপরাধেও বাংলাদেশ এশিয়ার অন্যতম বলে মনে করা হয়।
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের অপরাধের মধ্যে শীর্ষে অবস্থান করছে সন্ত্রাস। সন্ত্রাস অপরাধ কয়েক রকমের, যথা রাজনৈতিক সন্ত্রাস, ধর্মীয় সন্ত্রাস, আদর্শিক সন্ত্রাসবাদ, উপজাতীয় সন্ত্রাস ইত্যাদি। রাষ্ট্রের কয়েকটি শাখা সন্ত্রাসী অপরাধের শিকার যথা, ক্রয়, জ্বালানি, যোগাযোগ, আইন-শৃংঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী, তথ্য ও প্রযুক্তি খাত, শিক্ষা এবং জনস্বাস্থ্য। তাত্ত্বিকভাবে সন্ত্রাস বিকাশের জন্য দায়ী বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান, রাজনৈতিক অসহিষ্ণুতা, আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীর সাথে সহজ যোগাযোগ, আইন-শৃঙ্খলরক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনের দুর্বলতা এবং দুর্নীতি, অদক্ষ সীমান্ত পাহারা, দারিদ্র্য, অর্থনৈতিক অসাম্য, নিরক্ষরতা, বেকারত্ব প্রভৃতি। তাছাড়া বর্তমানে নারী ও শিশুদের প্রতি নানা সহিংস অপরাধ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। যেমন-ইভ টিজিং, ধর্মীয় ফতোয়া প্রদান, ধর্ষণ, খুন, অনৈতিক সম্পর্ক অথবা পারিবারিক অশান্তির কারণে শিশু খুনসহ আত্মহত্যা প্রভৃতি।
10 জানুয়ারী 2019 যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (ইআইইউ) এ বছরের ৯ই জানুয়ারি যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সেখানে 'গণতান্ত্রিক' কিংবা 'ত্রুটিপূর্ণ গণতান্ত্রিক' দেশের তালিকায় বাংলাদেশের নাম নেই। গত এক দশক ধরে স্বৈরতান্ত্রিক ও ত্রুটিপূর্ণ গণতান্ত্রিক অবস্থার মাঝামাঝি 'হাইব্রিড রেজিম' তালিকায় দেশটি অবস্থান করছে বলে ইআইইউ বলছে। তবে বৈশ্বিক গণতন্ত্র সূচকে ২০১৮ সালে বাংলাদেশের স্কোর আগের বছরের তুলনায় ০.১৪ বেড়েছে। ফলে ২০১৭ সালে যেখানে দেশটির অবস্থান ছিলো ৯২তম, পরের বছর হয়েছে ৮৮তম। ২০১৮ সালে বাংলাদেশ ৫.৫৭ স্কোর পেয়ে ইআইইউ-এর 'হাইব্রিড রেজিম' তালিকায় রয়েছে।
'হাইব্রিড '-এর বৈশিষ্ট্য কী? 'ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্র' এবং 'স্বৈরতন্ত্রের' মাঝামাঝি অবস্থান 'হাইব্রিড রেজিম' আসলে কী? একটি দেশের কোন কোন বৈশিষ্ট্যের জন্য এই তালিকায় পড়ে - ইআইইউ-এর গবেষণা পদ্ধতিতে বিষয়টি ব্যাখ্যা করা হয়েছে। সেখানে যা বলা হয়েছে তা হলো - নির্বাচনে বেশ অনিয়মের ঘটনা ঘটে, যা নির্বাচনের সুষ্ঠুতা ও নিরপেক্ষতায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে; বিরোধী দল এবং প্রার্থীর ওপরে সরকারি চাপ খুবই সাধারণ ঘটনা; রাজনৈতিক সংস্কৃতি, সরকারের সক্রিয়তা এবং রাজনৈতিক অংশগ্রহণের বিষয়ে মারাত্মক দুর্বলতা দেখা যায়, যা ত্রুটিপূর্ণি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা থেকেও বেশি; দুর্নীতির বিস্তার প্রায় সর্বত্র এবং আইনের শাসন খুবই দুর্বল; সিভিল সোসাইটি দুর্বল; সাধারণত, সাংবাদিকরা সেখানে হয়রানি ও চাপের মুখে থাকে এবং বিচার ব্যবস্থাও স্বাধীন নয়।
<চলবে>

কোন মন্তব্য নেই